চাঁদপুরের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ জনের মৃত্যু : ডিআইজি আনোয়ার

  14-10-2021 09:25PM

পিএনএস ডেস্ক: কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় চার জনের নিহতের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় সাত জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

বুধবার রাতের ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের হুইপ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় হামলার শিকার কয়েকটি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্পদের ওপর আঘাত এসেছে, মানুষের জীবনের ওপর আঘাত এসেছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতির আলোকে যারা শৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তারা আত্মরক্ষায় এবং জানমালের নিরাপত্তায় ফায়ারিং করেছে। সর্বমোট চার জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মৃত্যুবরণ করেছে।সাত জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৯ পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছে।’

পুলিশ জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর আখড়া (ত্রিনয়নী), দি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ মন্দির, পৌর মহাশ্মশান, জমিদার বাড়িসহ কয়েকটি পূজামণ্ডপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় নিহত হন টাইলস মিস্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুন্দরপুর বাগডাঙা এলাকার সামছুর ছেলে বাবলু (৩৫), হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১১ নম্বর ওয়ার্ড রান্ধুনী মুড়ার শুকু কমিশনার বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (১৮) ও একই ওয়ার্ডের সেকান্দর বেপারী বাড়ীর মো. ফজলুর ছেলে হৃদয় (১৪)। এ ছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে মারা যান পৌরসভাধীন রান্ধুনী মুড়ার বাচ্চুর ছেলে শামীম (১৯)।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় তৌহিদী জনতার ব্যানারে মিছিল বের করে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ায় হামলা চালানো হয়। এ সময় তাদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তখন পুলিশ গুলি চালায়। এতে চার জন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হাজীগঞ্জ বাজারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এসএম শোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, হাসপাতালে ১০ জন গুরুতর আহত অবস্থায় আসেন। তাদের কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, তিন জন নিহতের বিষয়টি হাসপাতালে রেকর্ড করা আছে। অপর জনের রেকর্ড নেই। এর মধ্যে দুই জন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন, অপরজনকে হাসপাতালের নেওয়ার পর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ১৯ জন পুলিশ সদস্যসহ ২৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহি দাস বণিক বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে মন্দিরে হামলা চালালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, মৌলবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই মৌলবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্তের হীন চেষ্টা শুরু করে।

তিনি বলেন, কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কখনো অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করতে পারেন না। সবসময় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরাই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছিরউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব-উল আলম লিপন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, কচুয়া পৌরসভার মেয়র নাজমুল আলম স্বপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মো. মাইনুদ্দীন, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন মিয়াজী প্রমুখ।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন