মায়ের আশ্রয় হয়নি ডাক্তার-ব্যাংকার ছেলের ঘরে

  21-10-2021 12:14PM

পিএনএস ডেস্ক: উচ্চ শিক্ষিত ৬ ছেলে ২ মেয়ে। যার যার অবস্থান থেকে সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত। কারও নেই অভাব অনটন। মানুষের দৃষ্টিতে সবাই প্রতিষ্ঠিত। তারপরও তাদের একমাত্র মা মরিয়ম বেগমের স্থান হয়নি কোন সন্তানের কাছে। মরিয়ম বেগমের বয়স প্রায় একশর কাছাকাছি। হাহাকার করতে হয় একমুঠো ভাতের জন্য।

বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের আট সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আক্তার হোসেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। অন্য ছেলেদের মধ্যে আবদুল্লাহেল বাকী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সাখাওয়াত হোসেন সাকি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, ছোট ছেলে ডাক্তার হুমায়ূন কবির শিশু বিশেষজ্ঞ (বিসিএস), জাহাঙ্গীর হোসেন ব্যবসায়ী এবং আলমগীর হোসেন প্রবাসী। প্রবাসী আলমগীর হোসেন ছাড়া বাকি পাঁচ ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়।

আরও জানা যায়, বাকি দুই মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের অবস্থাও বেশ ভালো। কারো সংসারে অভাব অনটন নেই বললেই চলে।

শুধু বৃদ্ধ মাকে ভরণ-পোষণ করতেই তাদের হাজারো অভাব। প্রত্যেকে তাদের স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করছে। কিন্তু মায়ের যন্ত্রণা আর অশান্তিতে ভরপুর। খেয়ে না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় দিনাতিপাত করছেন আট সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করেন প্রতিনিয়ত। কোনো ছেলে কিংবা মেয়ের ঘরে আশ্রয় হয়নি শতবর্ষী মরিয়ম বেগমের। কেউ একবার খোঁজও নেন নি। বর্তমানে প্রতিবেশির ঘরে আশ্রয় হয়েছে মরিয়ম বেগমের।

মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে একা বের হন মরিয়ম। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মরিয়ম পড়ে যান রাস্তার পাশেই। আহত হন তিনি। শরীরের অনেক স্থানেই ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। ছেলে-মেয়েরা খবর না রাখায় গ্রামবাসী তাকে দেখভালের দায়িত্ব দেন মরিয়ম বেগমের ভাইয়ের ছেলে আবদুল লতিফের কাছে। আবদুল লতিফ ওই বৃদ্ধার সেবা শুশ্রুষা ও চিকিৎসা করান।

এই ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের নরসিংহপুর (রশ্মিমপুর) গ্রামে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবদুর রফিক জানান, মরিয়মের বাবা আসুর উদ্দিন সরকার ছিলেন খুব ধনী একজন ব্যক্তি। শত শত বিঘা জমি ছিল তার। মেয়ের নামে (মরিয়ম) ১৫ বিঘা জমি লিখে দিয়েছিলেন তার বাবা। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই এনেছিলেন আবদুস সালামকে। মরিয়ম-সালামের দাম্পত্য জীবনে ছয় ছেলে দুই মেয়ের জন্ম। জমি বিক্রি করে প্রত্যেককে সুশিক্ষায় মানুষও করেছেন তারা। এখন তারা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত।

এক বিঘা জমি বিক্রি করে গত কয়েক বছর আগে ছেলে আলমগীরকে বিদেশ পাঠান মরিয়ম বেগম। এ নিয়ে অন্য ছেলেরা মায়ের প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। এখন মাকে কেউ ভরণ-পোষণ করেন না। মায়ের কোন খোঁজ খবরও রাখেন না। সকল ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেন, এখন সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ছোট ছেলেকে এক বিঘা জমি বিক্রি করে বিদেশ পাঠান। তাই নিয়ে বৃদ্ধ মায়ের প্রতি ক্ষোভ অন্য সন্তানদের। এখন কেউ খোঁজও নেন না এই বৃদ্ধ মায়ের।

স্থানীয়দের কাছে এখন সন্তানরা চক্ষুশুল। কারণ এমন প্রতিষ্ঠিত সন্তান থাকার পরও বৃদ্ধ মাকে একমুঠো খাবারের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। মনে হয় সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করাই যেন ভুল।

এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছেলে ডাক্তার হুমায়ূন কবিরকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তার সহকারী রিসিভ করে বলেন, স্যার এখন কথা বলতে পারবেন না। তিনি রোগী দেখতেছেন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে। পরে ফোন দিবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, মা-বাবাকে ভরণ-পোষণ না করলে ছেলে সন্তানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন