অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়াকে ফেলে যান স্বামী, দুদিনেও হয়নি রক্ত জোগাড়!

  25-06-2022 04:08PM


পিএনএস ডেস্ক : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়া বেগমকে (৩৩) মারধর করে স্বামী শামসু মিয়া ফেলে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে রাবেয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের অনুদান ও ব্যক্তিদের সহায়তার টাকায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে রাবেয়ার গর্ভপাত হয়। রাবেয়াকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রক্তের প্রয়োজন। তবে দুই দিনেও ‘বি পজেটিভ’ রক্ত জোগাড় হয়নি।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাবেয়া বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার কাছে ১০ বছরের মেয়ে সাথী ছাড়া কেউ নাই। স্বামী খোঁজখবর না নিয়া ঢাকা চলে গেছেন। আমাকে তিন ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। দুই দিনেও রক্ত জোগাড় হয়নি। আপনজন কেউ পাশে নেই। কীভাবে রক্তের জোগাড় হবে?’

হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়হারজী গ্রামের শামসু মিয়ার সঙ্গে ১২ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা লালু মিয়ার মেয়ে পোশাকশ্রমিক রাবেয়া বেগমের বিয়ে হয়।

সম্প্রতি শামসু মিয়া স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। রাবেয়া ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রাবেয়া বেগম অভিযোগ করেছেন, গত রোববার কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁর স্বামী শামসু মিয়া তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। পরের দিন সোমবার রাবেয়া গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে পালিয়ে যান শামসু মিয়া।

হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকেরা রাবেয়া বেগমকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তিন দিন পার হওয়ার পর রাবেয়া বেগমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন খান সংবাদকর্মীদের বিষয়টি জানান। স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান হাসপাতালে যান।

খবর পেয়ে পুলিশ রাবেয়ার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্বামী শামসুকে না পেয়ে শামসুর বড় ভাইয়ের ছেলে রহিমকে নিয়ে আসেন। পরে গত বুধবার রাতে রহিমকে সঙ্গে নিয়ে রাবেয়াকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে রহিম শনিবার বাড়িতে চলে গেছেন। হাসপাতালের তিনতলার মহিলা ওয়ার্ডের চার নম্বর বেডে রাবেয়া চিকিৎসাধীন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিন দিন ধরে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও রাবেয়ার স্বামী বা পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেননি।

মঠবাড়িয়ার সাংবাদিক ইসরাত জাহান বলেন, ‘গত বুধবার আমরা জানতে পারি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্তের প্রয়োজন। পাশাপাশি তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিতে হবে।

এরপর উপজেলা প্রশাসন, হাসপাতালের চিকিৎসক, পুলিশ ও সাংবাদিকেরা ২৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। ওই টাকা দিয়ে রাবেয়াকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাবেয়া বেগমের গর্ভপাত হয়। এখন তাঁর তিন ব্যাগ বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। শনিবার সকাল পর্যন্ত রক্ত জোগাড় করা যায়নি।’

মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ রাবেয়ার ভাশুরের ছেলে রহিমকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল। পরে রহিমকে রাবেয়ার সঙ্গে বরিশালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : প্রথম আলো

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন