সিঁড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সেই শিশু হাসপাতাল থেকে উধাও

  19-08-2022 12:48PM




পিএনএস ডেস্ক :  নওগাঁয় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিঁড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতক হাসপাতাল থেকেই উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশু ওয়ার্ড থেকে উদ্ধার হওয়া সেই এক নবজাতক (কন্যা) নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

গত বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিট থেকে নিখোঁজ হয় শিশুটি। এর আগে রোববার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের চতুর্থ তলার সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে শিশু নিখোঁজের বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায় কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার সিঁড়িতে এক টুকরা কাপড়ে মোড়ানো ছিল নবজাতকটি। শিশুটির কান্না শুনে এগিয়ে যান দায়িত্বরত ওয়ার্ডবয় রাজু হোসেন। এ সময় শিশুটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। অজ্ঞাত হওয়ায় রাজু শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান। শিশুটি চার-পাঁচ দিন বয়সী হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

উদ্ধারের পর তার বিষয়ে তাৎক্ষণিক সদর মডেল থানা পুলিশকে জানায় কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার জন্য রাতেই এক নারী পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটিকে দেখভালের জন্য হাসপাতালে শিশুটির সঙ্গেই ছিলেন ওই নারী কনস্টেবল।

রাতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে তাকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে রাখা হয়। পরের দিন এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় শিশুটিকে রেখে চলে আসেন ওই নারী কনস্টেবল।

এরপর গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে দেখা গেলেও দুপুর ১টার পর আর দেখা যায়নি।

শিশু ওয়ার্ডে সে সময়ে দায়িত্বরত ইন্টার্ন নার্স আকলিমা খাতুন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে বাচ্চার অভিভাবক পরিচয়ে দুইজন নারী কেএমসি ইউনিটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রাখেন। পাশের কক্ষে রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর কেএমসি ইউনিটে ফিরে এসে কক্ষে ঢুকতে চাইলে দরজা বন্ধ রেখে তারা আমাকে কিছুক্ষণ পর আসতে বলেন। পরে এসে দেখি শিশুটি এবং ওই দুই নারী কোথাও নেই।

শিশু বিভাগের প্রধান ডা. রতন কুমার সিংহ বলেন, মঙ্গলবার সকালে রাউন্ডে শিশুটিকে দেখার পর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তারপর কীভাবে নিখোঁজ হলো আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কিছু জানতে হলে তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

নওগাঁ সদর মডেল থানার (ওসি তদন্ত) রাজিবুল ইসলাম বলেন, একটি শিশু পাওয়া গেছে মর্মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় অবগত করলে সেখানে একজন নারী কনস্টেবলকে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে অভিভাবক প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগতভাবে শিশুটি তারা হস্তান্তর করবে এমন লিখিত দিলে তাকে তাদের হেফাজতে বুঝিয়ে দেওয়ার পর নারী কনস্টেবল চলে আসে। কিন্তু হারানোর ঘটনায় পুলিশের কোনও গাফিলতি নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, শিশুটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝেও দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। পরে ছাড়পত্র ছাড়াই কে কীভাবে নিয়ে গেছে আমার জানা নেই।

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটি চুরি হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কোনো দায়িত্ব অবহেলা ছিলো না।তাকে হস্তান্তরের দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। শুনেছি শিশুটির মা এবং নানি পরিচয়দানকারী দুইজন মহিলা তাকে নিয়ে চলে গেছে।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন