করতোয়ায় নৌকাডুবি : যেভাবে বেঁচে ফিরলেন এই দম্পতি

  28-09-2022 03:03PM



পিএনএস ডেস্ক : এবার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মহালয়া দেখতে যাওয়ার কথা ভেবে কেনাকাটাও করেছেন। নিজের জমানো ২৫০ টাকা দিয়ে নতুন একটি শাড়ি আর স্বামীর জন্য ধুতি কিনেছিলেন।

স্বামীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো মহালয়া দেখতে যাওয়ার কথা ভেবে মনে মনে আনন্দে ছিলেন যশোবালা (৫১)। বিয়ের ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও একসঙ্গে মহালয়া দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তাদের।

নতুন শাড়ি আর ধুতি পরে আউলিয়া ঘাটে নৌকায় উঠেন যশোবালা-শুকাতু দম্পতি। নৌকায় পা ফেলানোর মতো জায়গা ছিল না। শুরুতে দুলতে দুলতে মাঝপথে গিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি। চারপাশে মানুষের মুখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। সবার চোখে-মুখে শুধু বেঁচে থাকার আকুতি।

তবে ছোটবেলা থেকেই সাঁতার জানতেন যশোবালা। তাই সাঁতার কেটে ছোট একটি নৌকায় ওঠেন। সেখানে দেখতে পান তার স্বামী ওই নৌকায় অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছেন।

পরে দুজনকে উদ্ধার করে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তারা দুজন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের বাড়ি উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের প্রধানপাড়া গ্রামে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যশোবালা বলেন, আগে একলা গেছিনু মহালয়া দেখিবা। এজন্য আড়াইশো টাকা দিয়া একখান নতুন শাড়ি কিনিছু। শাড়িখান পরে মহালয়া দেখিবা যাবার জন্য আউলিয়া ঘাটত গেনু। যাইয়া দেখি লোকে লোকারণ্য। নৌকাখান ঘাটত ভিড়ামাত্র লোকগুলা ধড়ফড় করি উঠিছে।

টলোমলো করতে করতে মাঝখানত যাইয়া উল্টে গেইছে। মানুষের উপরত মানুষ পড়ে গেইছে। মুই তো সাঁতার জানু। সাঁতার কাটিয়া ছোট নৌকা খানত উঠিনু। উঠিয়া দেখিনু বাউর বাপ (স্বামী) অজ্ঞান হইয়া আছে। তারপর নদীর ধারত আনিয়া হামাক হাসপাতালত নিয়া আসিল। চোখের সামনত অনেকগুলা লোক মারা গেইছে। এলা খালি মাথাডা ঘুরেছে মোর।

যশোবালার স্বামী শুকাতু বলেন, হামরা যে বাঁচে থাকিম এইডা ভাবিবার পারেছুনি মুই। ভগবান হামাক বাঁচাইছে। এলাও অসুস্থ লাগছে মোক।
এর আগে গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। যেহেতু নৌকায় যাত্রীর সংখ্যা নিশ্চিত না, তাই আজও আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা খরচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন