‘আত্মগোপনে’ যেতে মাকে টাকা পাঠান মরিয়ম মান্নান, তদন্তে পেয়েছে পিবিআই

  07-02-2023 01:35PM



পিএনএস ডেস্ক: খুলনার আলোচিত মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমের ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে উঠে এসেছে, পরিকল্পিতভাবে ওই ‘অপহরণ নাটক’ করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। এমনকি ‘আত্মগোপনে’ যেতে ‘নিখোঁজের দিন’ মাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে এক হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন তিনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ আগ থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। মূলত, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ওই পরিকল্পনা করা হয়। তবে ওই পরিকল্পনার মধ্যে তাঁর ভাই ও অন্য বোনেরা ছিলেন না। ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরে আসেন। এসব ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। তবে ওই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। সন্দেহভাজন হিসেবে মামলার এজাহারে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় সৎবাবাকেও গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান।

খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানিয়েছেন, সম্প্রতি মামলার তদন্তের কাজ শেষ করে তা অনুমোদনের জন্য পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদিত হলেই ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

মায়ের সন্ধান দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে মরিয়ম মান্নানের কান্নার এই ছবি দেখে তাঁর পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন অনেকে তদন্তের বিষয়ে গতকাল সোমবার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মরিয়াম মান্নান বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে কী পেয়েছেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? তদন্ত কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।’

২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ওই থানায় মামলা করেন আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার।

ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তাঁরা জামিনে।

ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে রহিমা বেগম তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় ‘মায়ের লাশ’ শনাক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম মান্নান ও তাঁর বোনেরা। আজ শুক্রবার সকালে মামলাটি তদন্ত করছেন খুলনা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আবদুল মান্নান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম মান্নান বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা দিয়েছেন আর প্রতিবেশীরা প্রতিবার নথিপত্র জমা দিয়েই বেরিয়ে গেছেন। সর্বশেষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই ওই নাটক করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

নিখোঁজ মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম মান্নান

মো. আবদুল মান্নান বলেন, মরিয়ম মান্নান ও তাঁর মা এবং বাদীকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁরা মুখ ফুটে কোনো কথা বলছেন না। রহিমা বেগম শুধু একটা কথাই বলছেন—তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। এর বাইরে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলেই তিনি চুপ করে থাকছেন। কোনো কথা বলছেন না। এসব কারণে তদন্তে কিছু বিষয় অজানা রয়ে গেছে। তবে রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনাটি যে পরিকল্পিত ছিল তা বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তদন্তে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ ও দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। -প্রথম আলো

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন