পাহাড়ে আধুনিকতার জাঁতাকলে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘ধর্মঘর’

  01-04-2023 03:49PM


পিএনএস ডেস্ক: পাহাড়ের এককালের সম্প্রীতির ধারক-বাহক ঐতিহ্যবাহী ‘ধর্মঘর’ আধুনিকতার জাঁতাকলে চাপা পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এখানকার হাট-বাজারে কিংবা জনবহুল রাস্তার ধারে এসব ধর্মঘর এক সময় বেশ চোখে পড়তো। এখন কালের পরিক্রমায় বাজারগুলো শহরে উন্নীত হওয়ায় ধর্মঘরগুলো বাণিজ্যিক দোকানপাটে পরিণত হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিকিকিনি করতে আসা লোকজন এসব ধর্মঘরে বিশ্রাম নিতো। দূর গ্রাম থেকে হেঁটে আসা পাহাড়ি-বাঙালি লোকজন ধর্মঘরে এসে বসে ক্লান্তি দূর করতো। পাশাপাশি ধর্মঘরে রাখা মাটির কলস থেকে পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাতো। খাগড়াছড়ি বাজারটি আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে শহরে রুপ নেওয়ায় এখানে স্থাপিত ধর্মঘরগুলো আর নেই। এসব ঘরগুলো একেকটি বাণিজ্যিক দোকান-প্লটে রুপ নিয়েছে। জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকার হাট-বাজারগুলোতে এখনো কিছু কিছু ধর্মঘর দেখা যায়। তা আবার শোচনীয় অবস্থায় বিরাজ করছে।

ধর্মঘর হচ্ছে একটি উঁচু (মাচাং) কাঠের তৈরি ঘর। এতে পুণ্য পাওয়ার আশায় একটি মাটির কলস ও একটি নারিকেলের মালা পানি পান করার জন্য রাখা হয়। পাশাপাশি বাঁশের তৈরি একটি হুকাও রয়েছে ধর্মঘরে। যাকে স্থানীয় ভাষায় দাবা বলা হয়। ক্লান্ত পথিক ধর্মঘরে উঠে ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নেন। ধর্মঘরে থাকা মালা দিয়ে কলস থেকে পানি পান করে তৃষ্ণা মেটান। শরীরকে চাঙ্গা করতে দাবাতে তামাক দিয়ে ধূমপান করেন। নারী পুরুষ সকলেই এ ধর্মঘরে বিশ্রাম নেন।

মারমা সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট লেখক অংসুই মারমা জানান, এককালের ধর্মঘর আজ হারিয়ে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ি দিঘীনালা সড়কে একটি ধর্মঘর রয়েছে। যার জন্য এলাকাটি ধর্মঘর এলাকা হিসেবে পরিচিত। তিনি এসব ঐতিহ্যবাহী ধর্মঘর রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

একইভাবে খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা জানান, সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন হচ্ছে এ ধর্মঘর। যা আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। তিনি তা রক্ষার্থে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দিঘীনালা সড়কের ধর্মঘরটির অবস্থা বেশ জীর্ণশীর্ণ। লোকজন বসে তামাক টানছিল সেখানে। তারা জানান, দূর গ্রাম থেকে কেনাকাটা করতে এসে আমরা ধর্মঘরে বিশ্রাম নিচ্ছি। ঐতিহ্যবাহী এ ধর্মঘরের অস্তিত্বকে ঠিকিয়ে রাখতে এর সংস্কারের দাবিও জানান তারা।

পিএনএস/আনোয়ার




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন