চেয়ারম্যান নিজেই ঠিকাদার, প্রকল্পের অর্থ পকেটে

  16-04-2024 08:36PM

পিএনএস ডেস্ক: নওগাঁর পত্নীতলায় মধইল ও শিবপুর হাটের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এক কোটি ২০ লাখ টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন নিয়ম না মেনে দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। দায়সারা এসব উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। তবে এতে কােন কিছুই হয়নি বলে হতাশার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দারা জানান, গত ৭-৮ বছরে মধইল ও শিবপুর হাটে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। অথচ হাট দুটি থেকে প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে সরকার। টেন্ডার না দিয়ে মধইল ও শিবপুর হাটের উন্নয়নে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমতিয়াজ জাহিরুল হক। পরবর্তীতে আরএফকিউ (রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন) পদ্ধতির মাধ্যমে মধইল হাটের জন্য ৮০ লাখ টাকা আকবরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল ইসলাম চৌধুরীকে ও শিবপুর হাটের উন্নয়নের জন্য ৪০ লাখ টাকা মাটিন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদকে বরাদ্দ দেয়া হয়। যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং বিধিবর্হিভূত।

বিধি মোতাবেক কোনো প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ জনসাধারণের প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও বাস্তবে প্রকল্প স্থানে কোনো সাইনবোর্ড বা ব্যানার টানানো হয়নি। হাট এলাকার বাসিন্দারা ঠিকাদারদের কাছে দরপত্রের সিডিউল ও কাজের তালিকা দেখতে চান। তবে তারা কোন বৈধ কাগজ তারা দেখাতে পারেননি।

স্থানীয়রা জানান, হাটের ছাউনিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো পুনর্নির্মাণ না করে জোড়াতালি দিয়ে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। যা কিছুদিন পরই আবার নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও।

হাটের সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, মধইল হাটে ড্রেন নির্মাণে সবচেয়ে নিম্নমাণের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া আর কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। পুরোনো ছাউনিগুলো জােড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে।

মধইল গ্রামের আল মামুন বলেন, শুনেছি হাট উন্নয়নে চেয়ারম্যান ৮০ লাখ টাকার প্রকল্প পেয়েছেন। তবে কী উন্নয়ন কাজ হবে তা জানি না। স্থানীয় বাসিন্দা রায়হান চৌধুরী বলেন, বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করায় এলাকাবাসীর মাঝে অসন্তােষ দেখা দিয়েছে।

শিবপুর হাটে গিয়েও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার আবারও অংশ নেবেন। তাকে আর্থিক সুবিধা দেয়ার জন্য পছন্দের লোক দিয়ে তড়িঘড়ি করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উল্লখ্য আকবরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল ইসলাম চৌধুরী ও মাটিন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ উপজেলা চেয়ারম্যানের খাস লোক হিসেবে পরিচিত।

আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল ইসলাম চৌধুরী জানান, কিছু ইটের সমস্যা ছিল, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধি নিজে সরাসরি ঠিকাদারি করতে পারে কী না, এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান ওবায়দুল ইসলাম।

মাটিন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, চেয়ারম্যনরা প্রকল্পের কাজ করতে পারবেন না, সে বিষয়টি আমার জানা নেই। কীভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা উপজেলা প্রশাসন বলতে পারবে।

এদিকে, প্রকল্পের শিডিউল ও দরপত্রের বিষয়ে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে তথ্য চাইলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তারা। আর কোন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সুদুত্তর দিতে পারেন নি উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমতিয়াজ জাহিরুল হক।

এসব প্রকল্পের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পপি খাতুন জানান, তিনি পত্নিতলায় নতুন যোগদান করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন ইউএনও।

মধইল ও শিবপুর হাটের উন্নয়ন কাজে নানা অনিয়মে অভিযোগ লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করে সংশ্লিষ্ট হাটের সুবিধাভোগীরা। তবে এখন পর্যন্ত বিষয়টি তদারকি না করায় হতাশা ব্যক্ত করেন তারা।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন