পিএনএস ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গার গ্রাম্য কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতক ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া পূর্বপাড়ার আব্দুর সেলিমের ছেলে রুবেল মিয়া (২৩) ও তার সহযোগী একই এলাকার আনিসের ছেলে সোহেল রানা (২০)।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান জানান, স্ত্রীর সম্ভ্রমহানির প্রতিশোধ নিতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন (২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু, মোটরসাইকেল, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গেল শনিবার (১ জুন) সকালে সদর উপজেলার পুরাতন ভান্ডারদহ গ্রামের একটি মাঠ থেকে গ্রাম্য কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ অন্যান্য দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন কাজ শেষে দোকান থেকে চা খেয়ে বাড়ি ফিরলেও ঘটনার দিন গভীর রাতেও বাড়ি ফিরেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শনিবার সকাল ৭টার দিকে লোকমুখে সংবাদ পেয়ে রাজাই শেখের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা খুনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তরার কথা স্বীকার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। তাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে রাজাই শেখকে খুন করেছে।
পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ কবিরাজি করে মানুষের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দিত। রুবেল মিয়া ও তার স্ত্রী শারীরিক চিকিৎসার জন্য রাজ্জাক শেখের শরণাপন্ন হয়। গত ৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে রুবেল ও তার স্ত্রীকে সদর থানার হোগলডাঙ্গা নবগঙ্গা নদীর ব্রিজের নিকট পান বরজের কাছে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় রাজাই শেখ। এসময় রুবেল মিয়াকে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠায় গ্রাম্য কবিরাজ রাজ্জাক শেখ। কিছুক্ষণ পরে রুবেল পান বরজে এসে রাজ্জাক ও তার স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পায়। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে আনুমানিক ৩৫/৪০ মিনিট পরে রাজ্জাক শেখ ও রুবেলের স্ত্রী পান বরজের নিকট ফিরে আসে। এ সময় রুবেল তার স্ত্রীকে দেখে খারাপ কোন কাজ করেছে বলে সন্দেহ করে। পরবর্তীতে রুবেল বাড়িতে এসে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রী কান্নাকাটির একপর্যায়ে স্বীকার করে আব্দুর রাজ্জাক কবিরাজ চিকিৎসা দেওয়ার নামে তার সম্ভ্রমহানি করেছে।
একই দিন রুবেল তার সহযোগী সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাজ্জাকের বাড়িতে যায়। রুবেল তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর জ্বীন তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে সুবদিয়া সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানির সামনে থেকে রাজ্জাক শেখকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে পুরাতন ভাণ্ডার দহের দিকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মোটরসাইকেলের পিছনে বসা রুবেল মিয়া তার কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে রাজ্জাকের গলায় পোচ দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জবাই করে ভিকটিমের মৃতদেহ রাস্তার পাশে গাছপালা দিয়ে ঢেকে রেখে বাড়িতে চলে যায় তারা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিমুদ্দিন আল আজাদ, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, ডিআইও-১ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী উপস্থিত ছিলেন।
পিআর
স্ত্রীর সম্ভ্রমহানির শোধ নিতে কবিরাজকে গলা কেটে হত্যা: গ্রেপ্তার ২
04-06-2024 11:37PM
