পিএনএস ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জজুড়ে শুরু হয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। এ সময় শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে আসা ৮-১০ সাংবাদিকও তাদের রোষানলে পড়েন এবং লাঞ্ছিত হন।
এ সময় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সেখানে থাকা ৬টি গাড়ি ও অন্তত ২০-২৫টি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। বিকাল ৪টার দিকে ঘেরাও করা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়। টানা সাড়ে ৬ ঘণ্টা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার ছায়েদুল হাসানসহ অফিসে থাকা প্রায় ৫৫ জন পুলিশ সদস্য আটকা পড়েন৷ এ সময় জীবন বাঁচতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। এতে ৪ জন আহত হলে তাদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসা খরচ হিসেবে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা মুক্ত হন বলে জানা গেছে।
এদিকে আগুনে সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ নানা সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত চলে এসব ঘটনা ঘটে।
বিকালে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের পেট্রল পাম্প, পাঠানপাড়ার রাজনৈতিক কার্যালয়, হুজরাপুরের বাসভবনে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। আগুন দেওয়া হয় পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমানের গ্রামীণ ট্রাভেলস পরিবহণের গ্যারেজে। সেখানে থাকা দুটি বাস ও দুটি ছোড় গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার বটতলাহাটের বাড়ি ও জোসনারা পার্কে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
এর আগে জেলা প্রশাসকের বাস ভবনে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এর আগে বিকালে সদর মডেল থানাতেও হামলা চালানো হয়। সন্ধ্যার আগে জেলা পরিষদে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং জেলা পরিষদের বিভিন্ন মালামাল লুট করে নেওয়া হয়।
শহরের স্বরুপনগরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রুহুল আমিনের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আদালতের মালখানা থেকে লুট করা হয় মাদকদ্রব্য ও মোটরসাইকেল। বিশ্বরোড মোড় ও মার্কেট চত্বরে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুটি প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়।
রাতে শহরের ক্লাব সুপার মার্কেট দোকান লুটপাটের চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই মার্কেটে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকেও লুটপাটের চেষ্টা চালানো হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে দোকান মালিক-কর্মচারীরা সারা রাত পাহারা বসায়। এছাড়া পাঠানপাড়ার আয়কর অফিসে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলামের বাড়ি ও তাদের জিকে ফাউন্ডেশনের ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস, পৌর কাউন্সিলরের বাড়ি ও মেয়রের অফিস ভাংচুর করা হয়।
নাচোলে সোনাইচন্ডি হাটে শেখ মুজিবুর ও শেখ হাসিনার ছবি পুড়িয়ে দেয় এবং আওয়ামী লীগ অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। ভোলাহাট উপজেলাতে শেখ মুজিবের মুর্যা ল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার ভারতে পালানোর সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজামুল হোদাকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে আটক করেছে বিজিবি। ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
সাড়ে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ২ লাখ টাকায় মুক্তি পেল এসপিসহ ৫৫ পুলিশ
06-08-2024 11:34PM