পিএনএস ডেস্ক: ভয়াবহ বন্যার পানি ধীরগতিতে নামলেও পরিস্থিতির ৫০ থেকে ৬০ ভাগ উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার পানি কমলেও নোয়াখালীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, পেটের পীড়ার প্রকোপ। এতে করে বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের শুধু ২০টি বেড রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২৫৭ জন রোগী ভর্তি আছে। অর্থাৎ বেডের চেয়ে ১২ গুণ রোগী ভর্তি আছে। এ অবস্থায় ফ্লোরে, বারান্দায় ও সিঁড়িতে থেকে রোগী চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীদের স্বজনদের ভিড়ে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। এর সঙ্গে তৈরি হয়েছে নোংরা পরিবেশেও। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এসবের পাশাপাশি ওষুধ-সংকটও দেখা দিয়েছে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অনেক সময় তারা কোনো চিকিৎসকের দেখা পান না। নার্সই তাদের একমাত্র ভরসা। আবার নার্সকেও সময় মতো ডেকে পান না তারা। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধও সরবরাহ করা হয় না। নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে বলেন বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানুলাসহ যাবতীয় সামগ্রী কিনে আনতে। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সবই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। স্যালাইন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না। দায়িত্বে থাকা কিছু নার্স স্যালাইন লুকিয়ে রাখেন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, গত দুই সপ্তাহের বন্যায় নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। গতকাল ২৫৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক জনের মৃত্যু হয়।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন রোগীর স্বজনদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বন্যার মতো একটি ভয়াবহ দুর্যোগকালীন মুহূর্তে কয়েকগুণ বেশি রোগীর চাপ রয়েছে। এরপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দিতে। হাসপাতালে জনবল ও ওষুধের সংকট আছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও জেলার আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌর এলাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বন্যার পানি খুবই ধীর গতিতে নামায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। জেলায় এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার আটটি উপজেলায় গতকালও (শনিবার) ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ৬৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এখনো অবস্থান করছে।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
নোয়াখালীতে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া
08-09-2024 02:04AM