চীনা কোম্পানিকে সঙ্গে নিল এশিয়া এনার্জি

  20-11-2016 12:31PM


পিএনএস ডেস্ক: ফুলবাড়ী কয়লা খনি উন্নয়ন ও খনি-সংলগ্ন এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মূল প্রতিষ্ঠান জিসিএম রিসোর্সেস পিএলসি। ১১ নভেম্বর চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

চায়না গেঝুবা গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (সিজিজিসিআইএনটিএল) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) অনুযায়ী, ফুলবাড়ী কয়লা খনি-সংলগ্ন এলাকায় দুই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যৌথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাবে এশিয়া এনার্জি।

সিজিজিসিআইএনটিএল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না গেঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডেরও অন্যতম সদস্য প্রতিষ্ঠান এটি।

সিজিজিসিআইএনটিএলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জিসিএমের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান মাইকেল তাং এক বিবৃতিতে বলেন, এ অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ ও সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপের সঙ্গে এ চুক্তি করতে পারায় আমরা আনন্দিত। পারস্পরিক লাভের জন্য একত্রে কাজ করতে আগ্রহী আমরা।

জিসিএম রিসোর্সেস লন্ডন স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মাধ্যমে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সমীক্ষা ও কর্মপরিকল্পনার জন্য ২০০৪ সালে দুই বছরের লাইসেন্স পায় জিসিএমের শতভাগ মালিকানাধীন কোম্পানি এশিয়া এনার্জি। ২০০৪-এর ২৮ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি এর মেয়াদ শেষ হয়। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) প্রদত্ত এ লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সরকার এ বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি। ফলে ২০০৬ সালের পর থেকে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে বিএমডির কোনো সম্পর্ক নেই। তার পরও ২০১১ সালে কয়লা উত্তোলন ও ফুলবাড়ী কয়লা খনির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদর বাড়াতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এশিয়া এনার্জি নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের কয়লা খনি নিয়ে তারা লন্ডনে শেয়ার ব্যবসা করছে। অথচ তাদের কোনো বৈধতা নেই। প্রতি বছর তারা লাইসেন্স নবায়ন ফি পরিশোধ করার দাবি করছে। যদিও বিএমডি তাদের জমা দেয়া টাকা নিচ্ছে না। এশিয়া এনার্জির সঙ্গে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য বিএমডিকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে জ্বালানি বিভাগ।

জানা গেছে, নিজেদেরই পরিচালিত সমীক্ষার ভিত্তিতে কয়লা উত্তোলনের লাইসেন্সের জন্য ২০০৪ সালেই সরকারের কাছে আবেদন করে এশিয়া এনার্জি। তবে জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স দেয়নি সরকার। দেশে এশিয়া এনার্জির কার্যক্রম বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জিসিএম রিসোর্সেসের বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আগে এশিয়া এনার্জির প্রতিনিধি দল ফুলবাড়ী সফরে গেলে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা। বিক্ষুব্ধরা ফুলবাড়ীর রাজারামপুর এলাকার এশিয়া এনার্জি কার্যালয় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি এন লাইয়ের গাড়ি ভাংচুর করে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে এশিয়া এনার্জির সব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানানো হয়।

ফুলবাড়ীর পাশাপাশি লন্ডনেও বিক্ষোভের মুখে পড়ে এশিয়া এনার্জি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এজিএমে যোগ দিতে গেলে বাধার মুখে পড়েন গ্যারি এন লাই। কিছু সময়ের জন্য বিক্ষোভকারীরা গ্যারি এন লাই ও অন্যদের ঘেরাও করে রাখেন।

বিক্ষোভকারীরা সে সময় এশিয়া এনার্জির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট এশিয়া এনার্জিবিরোধী বিক্ষোভে তিনজন নিহতের ঘটনাও উল্লেখ করা হয়। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করা হলে পরিবেশগত ও মানবিক কী ধরনের ক্ষতি হবে, তাও উল্লেখ করেন তারা।

২০১২ সালে এশিয়া এনার্জির মূল প্রতিষ্ঠান জিসিএম রিসোর্সেসের বিরুদ্ধেও লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছিল। সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। তারা এ প্রতিষ্ঠানকে ‘নিরাপদ ও শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করে।

প্রসঙ্গত, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে ও এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে জনতার বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে তিনজন নিহত হন। এর পর এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে এশিয়া এনার্জি। তারই অংশ হিসেবে চীনা কোম্পানির সঙ্গে এ চুক্তি করল প্রতিষ্ঠানটি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন