কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হচ্ছে বন্দরে

  09-12-2016 11:05AM


পিএনএস ডেস্ক: বন্দর থেকে ছাড় করানোয় জটিলতা দেখা দেয়ায় কোটি কোটি টাকার মেডিকেল ডিভাইস বা সার্জিক্যাল পণ্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কাস্টম কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত সব ধরনের মেডিকেল ডিভাইস পণ্য খালাস বন্ধ করে দেয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে। এতে বাজারে সংকট দেখা দেয়ায় এসব পণ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মেডিকেল ডিভাইস বা সার্জিক্যাল পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আগে নয় ধরনের এসব পণ্যের দেখভাল করত ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ অধিদফতর গত বছর মেডিকেল ডিভাইসের একটি গাইডলাইন তৈরি করে। এতে প্রায় চার হাজারের অধিক পণ্য আওতাভুক্ত করা হয়। এগুলোকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোনো পণ্য যাতে বন্দর থেকে খালাস করতে না পারে সেজন্য ১৩ নভেম্বর শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক। ফলে দেশের সব বন্দরে মেডিকেল ডিভাইস, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রি-এজেন্ট ও সার্জিক্যাল পণ্য আটকে যায়।

বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্র–ম্যান্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপম্যান্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা শাখার সভাপতি জাভেদ আহমেদ বলেন, দেশের চট্টগ্রাম, বেনাপোল, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে প্রায় হাজার কোটি টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি, রি-এজেন্ট ও সার্জিক্যাল পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রি-এজেন্টসহ প্রায় শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এসব পণ্য বন্দর থেকে ছাড় করাতে কাস্টম কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এখন দেশব্যাপী দোকানপাট বন্ধ রাখা ছাড়া আন্দোলনের অন্য কোনো পথ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলবে বলে জানান জাভেদ আহমেদ। এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন সার্জিক্যাল, প্যাথলজি, সায়েন্টিফিক এবং মেডিকেল ডিভাইসের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেশে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানোলা, ইনফিউশন সেট, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট, সাকসেশন ক্যাথেটার ও ডিসপোজেবল ফিডিং টিউব আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে বাজারে সংকট বেড়ে গিয়ে দামও বেড়েছে অনেকখানি। মাত্র ৩০ টাকার ফিডিং টিউব বর্তমানে বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সার্জিক্যাল পণ্য আমদানিকারকরা জানান, সরকার একদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সেøাগান দিচ্ছে, অপরদিকে আমদানিযোগ্য পণ্য দেশে আনতে বাধা দেবে, এটি চলতে পারে না।

ব্যবসায়ীরা জানান, গাইডলাইন তৈরির সময় ব্যবসায়ীদের কোনো প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে অভিজ্ঞদেরও রাখা হয়নি। শুধু কয়েকজন চিকিৎসক ও ওষুধ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে গঠিত কমিটি গাইড লাইনটি তৈরি করছে। ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও দাবি ছিল, সিভাইসগুলোতে নীতিমালার আওতার আনার। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন তাদের পাশ কাটিয়ে গাইডলাইন তৈরি করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, দেশের আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের মান দেখার মতো কোনো সংস্থা ছিল না। দেশের মানুষকে মানসম্মত মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য দেশের অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। যাতে মানুষ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পায়। তিনি জানান, সারা পৃথিবীতে মেডিকেল ডিভাইস দেখভাল করার গাইডলাইন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশে এ বিষয়টির দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসনের ওপর দেয়া হয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল ইনস্ট্র–মেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানিতে অনুমোদন থাকলেও জেএমআই কোম্পানির স্বার্থ রক্ষার্থে এসব মেডিকেল ডিভাইস দেশে আনতে দিচ্ছে না। এছাড়া সম্প্রতি অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া কোনো মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করা যাবে না বলেও দেশের সবগুলো বন্দরে চিঠি পাঠানো হয়। এতে ব্যবসায়ীরা অনুমোদিত পণ্যও অমদানি করতে পারছে না। ফলে তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিচ্ছেন।

সার্জিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানান, মেডিকেল ডিভাইস খালাসের বিষয়ে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গেও কথাবার্তা বলেছেন। সেখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের একটি ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস বিষয়ক গ্যাজেট শিগগিরই প্রকাশের কথা রয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে কয়েক দিনের সময় চেয়েছে এনবিআর। অথচ প্রচলিত আমদানি নীতি আদেশেও মেডিকেল ডিভাইস আনার বিষয়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুম্যান্টস অ্যান্ড হসপিটাল, ইক্যুইপম্যান্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বণিক সমিতি, ডায়াগনস্টিক রি-এজেন্ট অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কার্ডিও ভাসকুলার ইক্যুইপমেন্ট অ্যান্ড ডিভাইস ইমপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং সমগ্র বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইস ব্যবসায়ীরা ঔষধ প্রশাসনের হয়রানি থেকে মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সূত্র: মানবকণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন