নতুন কৌশলে চলছে ইসলামী ব্যাংক

  18-01-2017 07:00AM


পিএনএস ডেস্ক: ইসলামী ব্যাংকে নতুন নেতৃত্ব আসায় হঠাৎ বড় পবিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন কৌশল হাতে নিয়েছে ব্যাংটি। ব্যাংকর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সূত্রে এ আভাস পাওয়া গেছে। এই তিন কৌশলের কিছু বিষয় দৃশ্যমানও হয়েছে।
কৌশলগুলো হলো- ব্যাংকের বর্তমান কর্মীদের রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিবর্তন, একই সঙ্গে নতুন জনবল নিয়োগ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য আনা এবং কর্মীদের পদোন্নতি ও বেতন ভাতা বাড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা।
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক ব্যাংকের নতুন নেতৃত্ব এরই মধ্যে শাখা ব্যবস্থাপকদের ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক আদর্শ থাকলে এখানে আর কাজ করা যাবে না। তাই কাজ করতে চাইলে বর্তমানে যারা আছেন, তাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক আদর্শ লালন করা চলবে না।
তবে ব্যাংকিং কাঠামোতে কোনো কর্মীর রাজনৈতিক সম্পৃক্তায় কোনো আইনি বাধা নেই। কিন্তু ইসলামী ব্যাংককে জামায়াত ও শিবিরের কব্জা থেকে বের করে আনতে মূলত হঠাৎ বড় পবিবর্তন আনা হয়েছে। তাই বর্তমান কর্মীদেরও মনোভাবের পরিবর্তন চায় নতুন নেতৃত্ব। ব্যাংকটি একটি অভ্যন্তরীণ নোটিশ দিয়েও বিষয়টি কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ইসলামী ব্যাংকের নতুন নেতৃত্ব ব্যাংকের অভ্যন্তরে একটি ভারসাম্য আনতে চায়। এজন্য বেশকিছু জ্যেষ্ঠ পর্যায়ে নিয়োগ দেয়া হবে। তথ্য পাওয়া গেছে, ব্যাংকটি মালিকানা পাওয়া এস আলম গ্রুপ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এস আলম গ্রুপ এই নিয়োগের জন্য একটি তালিকা তৈরির কাজ করছে। সেভাবে ইসলামী ব্যাংক হয়তো পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে। সেখানে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ বিধিও লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
তবে বর্তমান নেতৃত্বের কাছে দুটি কারণে এর বিকল্প নেই। এক. ব্যাংকের অভ্যন্তরে কর্মীদের ভারসাম্য তৈরি, দুই. এস আলম গ্রুপের প্রত্যাশার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ব্যাংকের বতর্মান পরিস্থিতিতে দুটি কৌশলকে যথেষ্ট মনে করছে না পরিচালনা পর্ষদ ও নতুন নেতৃত্ব। তারা মনে করছে, ব্যাংকটি একটি শক্তিশালী আর্থিক বুনিয়াদের ওপরে দাঁড়ানো। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভেতরে অসন্তোষ বাড়বে। ফলে ব্যাংকটি ঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যাংকের ভেতরের কর্মীরা যাতে অসন্তুষ্ট না হন সেটি জরুরি।
এজন্য বর্তমান কর্মীদের পদোন্নতি ও সার্বিকভাবে বেতন ভাতা পুনর্বিবেচনার দিকে যাচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। তবে পদোন্নতিতে জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাদেরকে সুযোগ দেয়া হবে না। এজন্য প্রয়োজনে বিশেষ সংস্থার সহায়তা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক বড় ব্যাংক। তবে এতে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু কার্ডের পরিবর্তন হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিধিমালা ভেঙে নিয়োগ ও বেতন ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, ‘যা করা হবে তা বিধিমালা মেনে করা হবে। আর বেতন ভাতা তো ইসলামী ব্যাংকে কম। বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি।’
আর বড় পদোন্নতির বিষয়ে বলেন, ‘এটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকের বিভিন্ন পদে প্রমোশন ডিউ রয়েছে। বিষয়টি আমরা সুরাহা করতে চাই।’
ইসলামী ব্যাংক তার পরিবর্তন সামাল দিতে শৃংখলা ভাঙছে কিনা- বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা। তিনি বলেন, ‘এখানে সব কিছু যাতে ঠিক ঠাক মতো হয় তা খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসনে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় হঠাৎ বড় পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। আরমাডা স্পিনিং মিলের পক্ষে পরিচালক হিসেবে আরাস্তু খান যোগ দেন সেখানে। সেখানেই তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এরপরই চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ার ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের পদত্যাগপত্র উপস্থাপন করেন। এরপর তিনিও চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরই মুস্তাফা আনোয়ার সভা থেকে বের হয়ে যান।
এরপরই কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদ মিঞাকে নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন এমডি পদে যোগও দিয়েছেন তিনি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন