ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি চলছেই সেই সাথে বাড়ছে খেলাপির পরিমাণ

  19-02-2017 09:38AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: ব্যাংকগুলোতে দুর্নীতি আর জালিয়াতি চলছেই। সেই সাথে বাড়ছে ঋণ অবলোপন যা ইতো মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায় পৌছেছে। কোম্পানির নামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান এর মালিকরা। ভুয়া কোম্পানির কাগজপত্র তৈরি করে ঋণ নিচ্ছেন একশ্রেণির নামসর্বস্ব শিল্পপতি। ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব কোম্পানির কোনো সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ঋণ পাস হয়ে যাচ্ছে। ঋণ দেওয়ার পর দেখা যায়, ঠিকানা ব্যবহার করা হয় সেখানে কিছুই নেই। এমনকি যার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ওই নামেই কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের অভাবে ব্যাংকিং খাতে এমন ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে এমন কোম্পানির বিরুদ্ধে কয়েকশ’ অভিযোগ এসেছে। এই সময় ভুয়া ঠিকানা, জাল দলিল, মর্টগেজ ব্যবহার করে নেওয়া ঋণের মধ্যে ২২ হাজার কোটি টাকা রাইট অফ (অবলোপন) করেছে।

গত ডিসেম্বরে যেখানে মোট খেলাপির পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেরই সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ সালে ব্যাংক খাতে ঋণ অবলোপনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালে অবলোপন করা ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত তা ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অবলোপন করা ঋণের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকেই ১৮ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এই অবলোপনের একটি বড় অংশ ঠিকানাবিহীন ভুয়া কোম্পানির বিপরীতে ঋণ। ঠিকানাবিহীন এমন কোম্পানির বিপরীতে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে যা ব্যাংকগুলো আর ফেরত আনতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযোগের তদন্ত করে বের করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। বৃহৎ অঙ্কের ঋণ পাস হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তারা তা করছে না। ফলে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ব্যবস্থা এখনো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ।

সরকারি ব্যাংকগুলোতে লুটপাট করছে দুর্নীতিবাজরা। তাদের দুর্নীতির কারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে আজ মূলধন নেই। সবগুলো ব্যাংক এখন মূলধন ঘাটতি পোষাতে জনগণের করের টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। জনগণের করের টাকা এসব ব্যাংকে মূলধন হিসেবে জোগান দেওয়া হচ্ছে। এভাবে টাকা লুটপাট হচ্ছে, এসব বন্ধ করতে হবে। সরকারি ব্যাংগুলোতে ২০ শতাংশের বেশি মূলধন ঘাটতি হলে তাদের পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ক্ষমতা দিতে হবে। তার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিংও খুব দুর্বল। যে কোম্পানির কোনো ঠিকানাই নেই তার জন্য কীভাবে ঋণ পাস হয়। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের খুঁজে বের করতে হবে। লুটপাট, দুর্নীতি শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা নয়, রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়োগ করা পর্ষদ সদস্যরাও দায়ী। খেলাপি ঋণ আদায় করে ব্যাংকের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। ব্যাংকগুলোতে বারবার একই ধরনের অনিয়ম জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যেরকম জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তেমনি আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো নানা অনিয়ম করছে। ভুয়া কাগজ দিয়ে ঋণ নেওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে ২০১৬ সালেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক বসানোর পরেও ঋণ জালিয়াতি কমেনি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন