১৬ বছরে মোবাইল কোম্পানী ২৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রাপ্তি

  19-03-2017 10:36AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: গত ১৬ বছরে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার ২৪ হাজার ৫৯৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েছে। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে কত? অথবা কত টাকা পাচার করেছে? মোবাইল কোম্পানীগুলোর বিরূদ্ধে ইতোপূর্বে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠে। জাতীয় সংসদে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রামীণফোন থেকে সরকারের আয় হয়েছে ১১ হাজার ৩৬০ কোটি ৪৮ লাখ।

সব থেকে কম রাজস্ব এসেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক থেকে। টেলিটক থেকে সরকারের আয় ৪৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া রবি থেকে ৫ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৩ লাখ, বাংলালিংক ৫ হাজার ২০৮ কোটি ৩ লাখ, এয়ারটেল এক হাজার ৫৯৫ কোটি ৬৯ লাখ ও সিটিসেল থেকে ৬৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব এসেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মোবাইল কোম্পানিগুলোর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৫৮২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। মোবাইল কোম্পানীগুলোর বিরূদ্ধে এর আগে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠে।

চার কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি ২ হাজার ৪৯ কোটি টাক। গ্রামীণফোনের কাছে এক হাজার ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, বাংলালিংকের কাছে ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, রবি’র কাছে ৪১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, এয়ারটেলের কাছে ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ টাক, চার কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি ২ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। সিম পরিবর্তনের কথা বলে নতুন সিম বিক্রির মাধ্যমে চারটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারা গ্রামীণ ফোন, বাংলা লিংক, রবি ও এয়ারটেলকে (সাবেক ওয়ারিদ) এ বাবদ দুই হাজার ৪৯ কোটি টাকা পরিশোধের তাগিদ দিয়ে চিঠি দিয়েছে। ভ্যাট ফাঁকি বাবদ গ্রামীণ ফোনের কাছে এক হাজার ২৩ কোটি ২৩ লাখ, বাংলা লিংকের কাছে ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ, রবি’র কাছে ৪১৪ কোটি ৫৪ লাখ ও এয়ারটেলের কাছে ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাবে এনবিআর। যথাসময়ে পরিশোধ না করায় সুদসহ এ অর্থের পরিমাণ বর্তমানে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।

তবে এনবিআর শুরুতে ভ্যাট ফাঁকির মূল অর্থ আদায়ে উদ্যোগী হয়েছে। অবশ্য এনবিআর এর দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ ফোন ও বাংলা লিংক ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে। আর এ জন্য তাদেরকে দাবিকৃত অর্থ ১০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এ বিষয়ে সরকারি রাজস্বে কোন ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। শিগগিরই এ অর্থ আদায়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। কারো ক্ষতি করতে চাই না। তবে আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অর্থ দিতে হবে। তবে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো চাইলে এডিআরের (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি/সালিশি পদ্ধতি) মাধ্যমে এর সমাধান করতে পারে। ইতিমধ্যে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি এ উপায়ে এটি নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। সাধারণত মোবাইল ফোনের সিমকার্ড হারানো গেলে, ক্ষতিগ্রস্থ বা অকেজো হলে সংযোগ অপরিবর্তিত রেখে সিম পরিবর্তন করতে পারেন গ্রাহক। এটি সিম রিপে¬সমেন্ট হিসেবে পরিচিত। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের আগে পর্যন্ত এ জন্য সরকারকে কোন ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হতো না। কিন্তু নতুন সিম বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারকে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কোম্পানিগুলো সিম রিপে¬সমেন্টের যে হিসাব দেয় তাতে আপত্তি জানায় এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের বৃহত্ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট)। তারা দাবি করে, নতুন গ্রাহকের কাছে সিম বিক্রি করলেও ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে একে রিপে¬সমেন্ট হিসেবে দেখিয়েছে কোম্পানিগুলো।

কিন্তু মোবাইল অপারেটররা এনবিআর-এর এই দাবি অস্বীকার করে। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চিঠি চালাচালি হয়। পরে এনবিআরের এই দাবির বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। কিন্তু রিটের বিষয়বস্তু ‘অপরিপক্ক’ বিবেচনায় এটি এনবিআরের এলটিইউকে সমাধানের আদেশ দেয় আদালত। এর ভিত্তিতে এলটিইউ-ভ্যাট তখন একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। এনবিআর, মোবাইল ফোন কোম্পানি ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতিনিধিরা ছিলেন ওই কমিটির সদস্য। সিম রিপ্লেসমেন্ট তদন্ত সংক্রান্ত ওই কমিটি বিটিআরসির কারিগরি সহায়তায় প্রায় পাঁচ হাজার সিম দৈবচয়নের ভিত্তিতে নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখে। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের ১ হাজার ৪০০, রবির ১ হাজার ২০০, এয়ারটেলের ১ হাজার ৯৭ ও বাংলা লিংকের ১ হাজার ২০০টি সিম রয়েছে। কমিটি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রদর্শিত ডাটাগুলো অবিকৃত রয়েছে কিনা, সিম নম্বরের আলোকে ডাটাবেজে (তথ্যভরুার) প্রদত্ত সিমের মালিকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, সিম রিপে¬সমেন্টের আগের ও পরের মালিক অভিন্ন কিনা তা যাচাই করে। যাচাই-বাছাইকালে কোম্পানিগুলোর দেয়া তথ্যের ৯৫ শতাংশেরই মিল পায়নি কমিটি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন