বেসরকারি খাতে ৩৩শ' কোটি টাকার অবকাঠামো তহবিল

  24-05-2017 07:03AM


পিএনএস ডেস্ক: সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও অর্থায়ন সুবিধা (আইপিএফএফ) প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সুবিধা দিতে প্রকল্পটি পুনরায় শুরু করছে সরকার। এবার প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রকল্পের তহবিলের আকার হবে তিন হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক দ্বিতীয় মেয়াদের আইপিএফএফ প্রকল্পের অর্থায়ন প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্পটি। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আইপিএফএফ প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমবারের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় মেয়াদে প্রকল্পটি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভা দ্বিতীয় আইপিএফএফ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এখন পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেলে দ্বিতীয় মেয়াদের কার্যক্রম শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দ্বিতীয় আইপিএফএফ প্রকল্পের মেয়াদ হবে আগামী জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। বিশ্বব্যাংক এবার ৩৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার দেবে। সরকার দেবে ৬ কোটি ডলার। মোট ৪১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার (১ ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে) তহবিল গঠন করা হবে। এর মধ্য থেকে অবকাঠামো খাতে ৪০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ১৭৭ কোটি ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। বাকি অর্থ কারিগরি সহায়তা বিশেষ করে পণ্য ও সেবা কেনা, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়ন করা হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এগোলেও প্রয়োজনের তুলনায় অবকাঠামো খাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। অর্থনীতির আকারের বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম। অবকাঠামো বিচারে তা ১১৪তম। ব্যাপক ঘাটতি থাকলেও অর্থায়ন সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো স্থাপন বা পানি শোধনাগার নির্মাণের মতো অবকাঠামো প্রকল্পে দেশের বেসরকারি খাত আগ্রহ দেখাত না। কিন্তু সরকার উন্নয়নের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তাতে অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ জন্য বেসরকারি খাতকে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আনতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০০৭ সালে আইপিএফএফ প্রকল্প চালু করে সরকার। প্রকল্পটির মাধ্যমে সহজ শর্তে, কম সুদে ও দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিয়ে বেসরকারি খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বিষয়ক কার্যক্রমের সামর্থ্য বাড়ানোও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন(আইডিএ) যৌথভাবে এ প্রকল্পটি নেয়। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। গত ১০ বছরে আইপিএফএফ থেকে বিভিন্ন খাতের ২১টি প্রকল্পে দুই হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত ১২টি বিদ্যুৎ প্রকল্পে এক হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। চট্টগ্রামে একটি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, একটি জেটি ও একটি ড্রাইডক প্রকল্পে ৩০৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও আদমজী ইপিজেডে তিনটি পানি শোধনাগার প্রকল্পে ২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে আইপিএফএফ। এ ছাড়া দেশব্যাপী ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপন সংক্রান্ত দুটি আইপি অবকাঠামো প্রকল্পে ২৯৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে অবস্থিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে আইপিএফএফ। এ ছাড়া পিপিপি কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়াতে আইপিএফএফের আওতায় বাড়ি ভাড়া, গাড়ি কেনা, বিভিন্ন পরামর্শ সেবা সংগ্রহ বাবদ ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সাধারণত কোনো প্রকল্পকে যথার্থ মনে করলে একটি ব্যাংককে লিড ব্যাংক ধরে কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেয় আইপিএফএফ। দীর্ঘমেয়াদি এই ঋণের সুদ হার সরকারের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিল বা বন্ডের সুদহারের কাছাকাছি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন