চালের দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা

  21-09-2017 04:42AM

পিএনএস ডেস্ক: মজুদদারির বিরুদ্ধে অভিযান, ওএমএসের চাল বিক্রি ও বাজার সিন্ডিকেট বিশেষ নজরদারিতে থাকায় চালের দাম অব্যাহতভাবে কমছে। গতকাল বুধবারও বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি এক থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। অবশ্য কোথাও কোথাও চালের চড়া বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ওই সব জায়গায় অভিযান ও নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

চালের দাম কমতে থাকায় ভোক্তা, ক্ষুদ্র বিক্রেতাসহ খেটে খাওয়া মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তবে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছে, নজরদারিতে টান পড়লে আবারও অস্থির হতে পারে চালের বাজার। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আবারও সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

অভিযানের পর গত সোমবার থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে। গতকাল পটুয়াখালী, বগুড়া, কুষ্টিয়া, নাটোরসহ আট জেলায় চালের বাজারে ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। চালের ধরনভেদে ক্রেতারা এক থেকে পাঁচ টাকা কমে কেজিপ্রতি চাল কিনেছে।

পটুয়াখালীতে গতকাল দুই ধরনের মিনিকেট চাল ৬৫ ও ৭০ টাকা থেকে কমে ৬০ ও ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা দাম কমেছে। শুধু মিনিকেট নয়, অন্যান্য চালের দামও কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা করে কমেছে।
এর মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা ৫০ টাকার পরিবর্তে ৪৫ টাকা, মোটা ৪৭ টাকার পরিবর্তে ৪২ টাকা, আটাশ নামের একটি চাল (লম্বা ধরনের) ৫৮ টাকা, তিন দিন আগে ছিল ৬৩ টাকা। নুরজাহান পাড়ি নামের আরেক জাতের চাল ৫৩ টাকার পরিবর্তে ৪৮ টাকা কেজি দরে গতকাল বিক্রি হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে খাজানগর মিলগেটে চালের দাম কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা কমেছে।খুচরা বাজারেও গতকাল থকে তার প্রভাব পড়েছে। গতকাল কুষ্টিয়া বড় বাজার ও পৌর বাজারে গিয়ে দেখা যায় মিনিকেট চাল ৬০ টাকা, বাসমতী চাল ৭০ টাকা, আটাশ ও কাজললতা ৫৪ টাকা এবং স্বর্ণা মোটা চাল ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, গত দুই দিনে সব ধরনের চাল মিলগেটে কেজিতে দু-এক টাকা করে কমে।

গত রবিবার সিন্ডিকেটের হোতা আব্দুর রশিদের মিলের পর অভিযান চালানো হয় জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম চালকল বায়েজিদ এগ্রো ফুডে। ধারাবাহিক অভিযানের পর মঙ্গলবার এর প্রভাব পড়েছে কুষ্টিয়ার মোকামে। এদিন মোকামে অন্য দিনের তুলনায় খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম ছিল। ওই অভিযানের পর থেকে মজুদদার চালকল মালিকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা মজুদ করা ধান রাতের আঁধারে সরিয়ে নিচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

নাটোরে চালের বাজারে তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি। তবে কোনো কোনো বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি এক টাকা করে কমেছে। বাজার ঘুরে খুচরা ও পাইকারি বাজারের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

গতকাল সরেজমিনে নাটোর শহরের কানাইখালী চালপট্টি ঘুরে দেখা যায়, খুচরা প্রতিকেজি পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়, বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫১ টাকায়, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়, বিআর-২৮ ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায় এবং এলসির চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজি দরে।

বগুড়ায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মোকামগুলোতে দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল বগুড়ার পাইকারি বাজারে দেশি চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা কমেছে। আমদানি করা চালে কমেছে দুই থেকে আড়াই টাকা। দাম কমেছে মিলপর্যায়েও। তবে খুচরাপর্যায়ে দামের খুব একটা হেরফের হয়নি। শুধু মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে।

বগুড়ার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার গোদারপাড়া ও রাজাবাজারের চালের আড়তে মোটা চাল বিআর-২৮, গুটি ও স্বর্ণা কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব চাল ৫৪-৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়েছে। শুধু মোটা চালে দাম কমেছে কেজিপ্রতি দুই টাকা।

শেরপুর শহরের বেপারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নবী হোসেন (৩৮)। পেশায় রিকশাচালক নবী হোসেনের দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার। প্রতিদিন তাঁর চাল লাগে দুই কেজি করে। তিন দিন আগে (রবিবার) পাঁচ কেজি বিআর-২৮ চাল নবীনগরের হাজির বাজার থেকে কিনেছিলেন ৫৭ টাকা কেজি দরে। বাড়ির চাল ফুরিয়ে যাওয়ায় বুধবার দুপুরে হাজির বাজারে আরো পাঁচ কেজি চাল কিনতে গিয়ে জানতে পারেন চালের দাম কেজিতে দুই টাকা করে কমে গেছে।

জয়পুরহাটে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। বর্তমানে মোটা ও চিকন প্রতি কেজি চালের মূল্য আগের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে গেছে। গতকাল বিকেলে জয়পুরহাট শহরের আমতলী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন ৭০ টাকার মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজিতে। ৬৫ টাকার কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজিতে। দাম কমেছে জিরাশাইল, আটাশ, ষোলো ও স্বর্ণা-৫ জাতের চালেরও।

বিভিন্ন স্থানে অভিযান, জরিমানা রাজবাড়ীতে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি এবং মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে রাজবাড়ীর পাংশা বাজারের পাঁচ চাল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।

চট্টগ্রাম নগরের মাঝিরঘাট এলাকার একটি চালের গুদামে অভিযান চালিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্ধারিত সময়ের বেশি চাল গুদামজাত করার প্রমাণ পাওয়ায় একটি গুদাম মালিককে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে সতর্ক করা হয়েছে।

ফরিদপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আরো ছয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজল চন্দ্র শীল ও কামরুন নাহার।

র‌্যাব-৮, ফরিদপুর ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রহিস উদ্দিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়।



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন