হোমল্যান্ডের এমডি নিয়োগে আইডিআরএর সীমাহীন অনিয়ম

  15-11-2018 03:39PM

পিএনএস (আহমেদ জামিল) : বীমার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিল বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রচলিত নিয়ম-নীতি ও বিধি উপেক্ষা করে তারা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি আজিজুল ইসলামের অনুমোদনবিহীন থাকাবস্থায় যে সকল দায়িত্ব পালন করেছেন, আইন অনুয়ায়ী ওই সময়ের কার্যক্রমের কোনো বৈধতা নেই। বিগত ৫ বছর অনুমোদন না থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালনকালের বৈধতা দিল সংস্থাটি। বীমা আইনে এক সাথে ৩ বছরের অনুমোদন দেয়ার বিধান থাকলেও বিগত ৫ বছরের এক সাথে অনুমোদন নিয়ন্ত্রকের ইতিহাসে বিরল।

সূত্রে জানা যায়, হোমল্যান্ড লাইফের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি আজিজুল ইসলামকে দীর্ঘ ৫ বছর পর আডিআরএ অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ২০১৩ সাল থেকে তাঁর নিয়োগ অনুমোদন দেখানো হয়েছে।

দীর্ঘ সময় অনুমোদন ছাড়াই কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদন ছাড়া দায়িত্ব পালন আইনসিদ্ধ নয়।

অথচ কর্তৃপক্ষ সেটি আমলে না নিয়ে সকল নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ৫ বছর পেছন থেকে তাঁর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এই নিয়োগ অনুমোদন বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বচ্ছ অডিট হলে যা ভুমেরাং হতে বাধ্য। বিষয়টি কেউ দুদকের নজরে আনলে আর সঠিক তদন্ত হলে সংশ্লিষ্ট সবাই ফেঁসে যেতে পারেন।

তাঁর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন আবেদন ফাইলটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন টেবিলে বিগত ৫ বছর আটকে ছিল। কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী নিয়োগ অনুমোদনপত্রটি নিজেই সম্প্রতি আজিজুল ইসলাম তালুকদারের হাতে তুলে দেন। যদিও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রতি ঋণমালা ২০১২ অনুসারে সকল শর্ত পূরণ হওয়ায় তাকে নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

আজিজুল ইসলাম ২০১০ সালের ২৪ মে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি পদে প্রথম দফায় ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পান।

২০১৩ সালের ২৪ মে দ্বিতীয় মেয়াদে আরও ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পান।২০১০ সালের প্রথম দফায় তার নিয়োগ অনুমোদন পেলেও দ্বিতীয় দফায় তাঁর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন না করে ফাইল আটকে রাখে সংস্থাটি।

এভাবে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলতে থাকে। তবে অনুমোদন না পেলেও দিব্যি দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এ ব্যাপারে আইডিআরএ পক্ষ থেকে কখনো কোনো খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। এবং আপত্তি তোলা হয়নি।

হোমল্যান্ডের এমডির আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে আইডিআরএ বর্তমান কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি তাদের নজরে আনা হয়। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি করে দেয়া হয়।

মুখ্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা ২০১২ অনুসারে সকল শর্ত পূরণ হওয়ার কতা বলে কমিটি আজিজুল ইসলামকে সুপারিশ করে বলে সূত্র জানায়। কমিটির সুপারিশ ভিত্তিতে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাঁর নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়। একই সাথে তৃতীয় দফায় আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৬ সালে ২৪ মে থেকে ২০১৯ সালের ২৩ মে পর্যন্ত আরও ৩ বছরের জন্য তাঁর নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ইতিহাসে অতীতে এ ধরনের অনুমোদনের ঘটনা নজিরবিহীন ও বিধিবহির্ভূত গোঁজামিল বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন বীমা সেক্টরের বিজ্ঞজনেরা।

অনুমোদনবিহীন দায়িত্ব পালনকারী বিগত সময়ের কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও অনুমোদনের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি সংস্থাটির।

এ বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি আজিজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আইডিআরএ’র কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। তাঁরা এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা এই অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি জানান, নিয়োগ অনুমোদনের জন্য আইডিআরএ একটি কমিটি করে। আমার সব কিছু ঠিক থাকায় কমিটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে। তাই একসাথে সকল পেন্ডিং সময়ের অনুমোদন দিয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে আজিজুল ইসলামের অনুমোদনপত্রটি আটকে থাকলেও হঠাৎ এক সাথে দু’মেয়াদের অনুমোদন দেয়ায় নিয়ে বির্তক তৈরি করেছে আইডিআরএ। অভিজ্ঞদের ব্যাপারটি অবাক করছে।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রয় কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ও সদস্য লাইফ এম মোশারফ হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দিনের পর দিন ‘তারা অফিসে নেই, দেশের বাইরে আছেন বলে বলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। কবে আসবেন এ বিষয়েও কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে আইডিআরএ সূত্রে জানায়, সংস্থাটির অনেকেই কিছু দিন পর পর বিদেশে ভ্রমণ করা রোগে পরিণত।

আইডিআরএ’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সদস্য গকুল চাঁদ দাস জানান, চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ও সদস্য লাইফ এম মোশারফ হোসেনই পারেন বিষয়টি খোলাসা করতে।

পিএনএস/জ এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন