দীর্ঘ হচ্ছে ঋণের সুদহার বাড়ানো ব্যাংকের তালিকা

  31-03-2019 02:54PM

পিএনএস ডেস্ক :দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টিতে এখনো ঋণের সুদহার ডাবল ডিজিটে রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি ব্যাংক তাদের গড় সুদহার বাড়িয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি সব ব্যাংকই এখন সুদহার বাড়াচ্ছে।ব্যাংক মালিকরা ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অঙ্কে) নামিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন নেই। শুরুতে হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক ওই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেও এখন আবার বাড়াতে শুরু করেছে ঋণের সুদহার।

সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে ৩১টি ব্যাংক তাদের ঋণের গড় সুদহার বাড়িয়েছে। আগের মাসে (জানুয়ারি) ঋণের সুদহার বাড়িয়েছিল ২৮টি ব্যাংক। আর ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২৭টি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রতি মাসে ঋণের সুদহার বাড়ানো ব্যাংকের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ এবং খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আর ব্যবসায়ী ও শিল্পোদোক্তারা বলছেন, ঋণের সুদহার বাড়ায় তাদের সমস্যা হচ্ছে। এতে শিল্প-কারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। উচ্চ সুদের কারণে নতুন শিল্প বাধাগ্রস্ত হবে। সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানান তাঁরা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মাসে যেসব ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে তার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকই ২১টি। এ ছাড়া বিদেশি ছয়টি, রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ও বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। তবে এ মাসে ১৯টির মতো ব্যাংক আগের মাসের চেয়ে সুদহার কিছুটা কমিয়েছে। এ ছাড়া এ মাসে প্রায় সাতটি ব্যাংকের সুদহার অপরিবর্তিত ছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের ক্ষেত্রে ৬ ও ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা এখন পুরনো ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। সেটা আর বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হয় না। তার ওপর এখন ভালো গ্রাহকদের ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এতে খেলাপি ঋণ কমবে না, বরং বাড়বে।

নতুন প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ৬ শতাংশে ব্যক্তি আমানত পাচ্ছি না। কোনো প্রতিষ্ঠানও ৬ শতাংশে আমানত দিচ্ছে না। যদি তা-ই হয়, তবে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করব কোথা থেকে? এর ওপর এখন ভালো গ্রহীতাদের ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে তো ৪ শতাংশে আমানত আসতে হবে। কিন্তু এখন মূল্যস্ফীতির হারও এর চেয়ে অনেক বেশি। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদহার দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় ১২ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে আমাদের কাছে কম সুদে আমানত রাখবে কে?

জানা যায়, ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মালিকরা গত বছর সরকারের কাছ থেকে একের পর এক সুবিধা আদায় করেছিলেন। এর মধ্যে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার কমানো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধারের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থা রেপোর সুদহার কমানো হয়। এসব সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যই ছিল সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। নানা সুবিধা পাওয়ার পর ব্যাংকের উদ্যোক্তারা গত বছরের জুন মাসে সিঙ্গেল ডিজিট বা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেন। একই বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সরকারি চার ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই তা কার্যকর করেনি।

এক মাসেও সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় একই বছরের ২ আগস্ট তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট থেকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ কার্যকর করতে হবে। পরে একই বছরের ৯ আগস্ট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ৯ আগস্ট থেকে ঋণে ৯ এবং আমানতে ৬ শতাংশ সুদহার কার্যকর করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যেক ব্যাংককে অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

এরপর কিছু ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করে। সুদহার যাদের বেশি ছিল তারাও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছিল। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর থেকে ঋণের সুদহার আবার বাড়তে শুরু করে।সূত্র: কালের কণ্ঠ।


পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন