কাশ্মির সমস্যা ও সমাধান

  21-10-2016 07:36PM

পিএনএস ডেস্ক : কাশ্মির সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে বর্তমান অবস্থার সাথে অতীতের ইতিহাসও জানতে হবে। এ উপমহাদেশে ইংরেজদের শাসনকালে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তে বড় লাট লর্ড ওয়েলেসলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ জরুরি মনে করেন। এ সময় ভারতের পরস্পর বিবদমান ছোট ও বড় রাজ্যগুলো ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সামরিক সাহায্যের জন্য উদগ্রীব ছিল। বড় লাট লর্ড ওয়েলেসলি বহুল আলোচিত অধীনতামূলক মিত্রতার (ঝঁনংরফরধৎু অষষরধহধ) মাধ্যমে রাজ্যগুলোকে ব্রিটিশের আওতাধীন করলেন। ছোট-বড় মিলে ৩৬২টি রাজ্য এভাবে ঔপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গ শাসকের বন্ধু হয়ে গেল। এগুলোর নাম দেয়া হলো প্রিন্সলি স্টেটস। অনেক চড়াই-উৎরাই ও দীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারত স্বাধীন হয়। তবে অখণ্ড ভারত হিসেবে নয়, জন্ম নেয় দু’টি স্বাধীন দেশ। ভারত বা হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান ছিল উপমহাদেশের পশ্চিম সীমানায়। আসাম প্রদেশসংলগ্ন উপমহাদেশের পূর্বভাগে ও বাংলার পূর্বাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।

ব্রিটিশেরা চলে যাওয়ার সময় প্রিন্সলি স্টেটগুলোর ভাগ্যে কী হবে, এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট নীতিমালা দেননি। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণে অবস্থিত নিজাম শাসিত হায়দরাবাদ ছিল বড় রাজ্য। এর অবস্থান দক্ষিণ ভারতের প্রায় মধ্যভাগে। চার দিকে ভারত-বেষ্টিত ও জনগণের ৮৫ শতাংশ অমুসলিম। এই কারণ দেখিয়ে ভারতীয় শাসকেরা দেশটিকে ‘Operation Polo’ অভিযানে দখল করে নেয়। ভারতের পশ্চিমাংশে গুজরাটের জুনাগড়ে ‘খানজি’ উপাধিধারী-শাসকদের শাসন চলেছিল প্রায় ১০০ বছর।

তাদের সর্বশেষ শাসক ছিলেন তৃতীয় মুহম্মদ মহবত খানজি। অনেকটা সমুদ্রের তীরবর্তী অবস্থানের রাজ্যটির সাথে করাচির যোগাযোগ ছিল সমুদ্রপথে। স্থলপথে সেখানে যাতায়াতের কোনো সংযোগ পথ ছিল না। জনগণের প্রায় ৮৫ শতাংশ অমুসলিম ছিল, এটাও ভারত দখল করে। জুনাগড়কে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করা ছিল দুরূহ।

সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিলো কাশ্মির নিয়ে। দেশটির সাথে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশেরই সীমানা রয়েছে। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান নামে মুসলিম প্রধান দেশটির সাথে কাশ্মির যোগ দেবে এমনটি আশা করেছিল; কিন্তু জটিলতা দেখা দিলো। দেশের প্রধান বা রাজা ছিলেন ভোগরাগোত্রীয় হিন্দু। উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাজা তখন বিব্রতকর অবস্থায়। তিনি সর্বশেষ সিদ্ধান্তে শর্তসাপেক্ষে ভারতে যোগ দিতে সম্মত হলেন। ভারতীয় বাহিনীকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানালেন। এ দিকে কাশ্মিরের সংখ্যাগুরু মুসলিম অধিবাসীদের ইচ্ছায় পাশের দেশ পাকিস্তানের সীমান্তের পাহাড়ি উপজাতীরা (ওয়াজিরি, আফ্রিদি, ইউসুফজাই, সুলেমানখেল) কাশ্মিরে প্রবেশ করতে থাকে। এভাবে একটি সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় ইপির ফকিরের ৬০ হাজার অনুসারীও যুদ্ধে অংশ নেয়।

কাশ্মিরে ভারত দ্রুত সৈন্য পাঠিয়ে দিলো। কাশ্মিরের বৃহদাংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

’৭১ সালে পাকিস্তানের ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দীকে ফিরে পাওয়ার জন্য তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো কাশ্মির সমস্যাকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা বলে মেনে নিলেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত কাশ্মিরে গণভোট গ্রহণের দায়বদ্ধতা থেকে ভারত মুক্ত হলো। এ দিকে প্রায় সাত দশক ধরে কাশ্মিরে লড়াই চলছে। ফলে উভয় দেশকে বিশেষ করে ভারতকে সে দেশে নিয়মিত প্রতিরক্ষার জন্য বিপুল খরচ করতে হচ্ছে। কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি করছে। স্বাধীনতাকামী কাশ্মিরিরা তৎপরতা অব্যাহত রাখবে এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনী জবাব দিলে সঙ্ঘাত বেড়ে যাবে।

আমরা আশা করি, আলোচনার টেবিলে কাশ্মির সমস্যার সমাধান হবে, যদি সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকে। সমাধানের মন নিয়ে বসতে হবে। আমরাও একসময় পাকিস্তানের নাগরিক ছিলাম। সে দেশের তদানীন্তন স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাম অনেকেই জানেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কত বড় সর্বনাশ করেছেন ইতিহাসের পাতায় তা লিপিবদ্ধ থাকবে। একসময় আমরা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ এক আদর্শেই বিশ্বাসী ছিলাম। অতীতকে টেনে না এনে আমাদের সমস্যাগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। ভারত সহনশীল হলে দেশটির মর্যাদা ও অবস্থান উন্নত হবে। দুই রাষ্ট্রে যুদ্ধ বাধলে এর পরিণতি কোথায় দাঁড়াবে বলা যায় না। ক্ষমতার মেরুকরণে কোন দেশ কোথায় অবস্থান নেবে তা-ও আমাদের জানা নেই। অতীতের ঘৃণা-বিদ্বেষ ভুলে আমাদের মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটুক এই প্রত্যাশা করি। Let us remain brothers.

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন