হিলারির জয় ঠেকানো অসম্ভব!

  22-10-2016 11:29AM




পিএনএস ডেস্ক: আর মাত্র ১৭ দিন বাকি নির্বাচনের। শুক্রবার সর্বশেষ জরিপগুলোর গড় ফলাফল বিশ্লেষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারি থেকে পিছিয়ে আছেন ৮ শতাংশ ভোটে। যেটা সাম্প্রতিক ইতিহাসের বেশ বড় ব্যবধান। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী হতে হলে বর্তমানের জরিপ ফলাফল উল্টে দিয়ে পাহাড় ঠেলতে হবে বলে জানিয়েছে খোদ রিপাবলিকানদের প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজের ইলেক্ট্ররাল কলেজ ম্যাপ বিশ্লেষণ।

ইলেক্ট্ররাল ভোট বিবেচিত হয় রাজ্যভিত্তিক জনসংখ্যার বিপরীতে নির্ধারিত প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংখ্যা হিসেবে। সেই ইলেক্ট্ররাল ভোট ম্যাপ দেখাচ্ছে যেসব রাজ্য এরই মধ্যে ডেমোক্রেটরা নিশ্চিত জয় পাচ্ছেন তাতে হিলারির ইলেক্ট্ররাল ভোট পৌঁছে গেছে ৩০৭টিতে, আর ট্রাম্পের দখলে ১৮১টি। প্রেসিডেন্ট হ্ওয়ার জন্য দরকার ২৭১টি ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে থাকা ২টি রাজ্য, ওহাইয়ো এবং আই্ওয়াতে তিনি নির্বাচিত হলে তার বর্তমানের ইলেক্ট্ররাল ভোট বেড়ে সর্বোচ্চ ২০৫টিতে দাঁড়াতে পারে। আর হিলারির পক্ষে জরিপে এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলোতে জয় পেলে তার ইলেক্ট্ররাল ভোট দাঁড়াবে ৩৩৪টিতে, যেটা হবে এককথায় ভূমিধস বিজয়।

শুধু নির্বাচনী ব্যাটেলগ্রাউন্ড ৬-৮ রাজ্য নয়, জাতীয়ভাবেও পপুলার বা জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে আছেন হিলারি, ৬ থেকে ১২ শতাংশ ভোটে। ভিন্ন ভিন্ন জরিপ ফলাফলগুলোর সমীকরণ করে ফক্স নিউজ দেখিয়েছে, গড়পড়তা হিলারি এগিয়ে আছেন ৮ শতাংশ ভোটে। জাতীয়ভাবে হিলারি, ৪৭ শতাংশ ভোট আর ট্রাম্প আছেন ৩৮ শতাংশ ভোট নিয়ে। আর সব যুদ্ধক্ষেত্র বা ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য যেমন ফ্লোরিডা, নেভাডা, অ্যারিজোনা, কলোরাডো, উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ভার্জিনিয়াতে বেশ বড় ব্যবধানে হিলারির জয় তুলে নেওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে সব জরিপে। এই সংখ্যা উল্টে দিয়ে ট্রাম্পকে জয়ের পক্ষে যারা বাজি ধরছেন, তাদের বুক দিয়ে পাহাড় ঠেলতে হবে। তবে সম্ভব, যদি ডেমোক্রেটরা জয় হাতের মুঠোয় ভেবে ভোটকেন্দ্রে না যায় ৮ নভেম্বর। সেই আশঙ্কাও বেশ প্রবল ডেমোক্রেট শিবিরে।

ট্রাম্প নিজে এবং তার কর্মী সমর্থকদের একমাত্র আশা, ইংল্যান্ডে ব্রেক্সিট ভোটের মতো শেষ ১৭ দিনে একটি গণজোয়ার তৈরি হলেই জয়ী হবে ট্রাম্প। গত সপ্তাহে ট্রাম্প নিজেই একটি জনসভায় বলছিলেন, জরিপ সব ভুয়া, এটা বিশ্বাস করা ঠিক নয়, আমি নিশ্চিত জয়ী হবো ইংল্যান্ডের ব্রেক্সিট ভোটের মতো। ব্রেক্সিট জয়ী হবে এটা গণমাধ্যম জরিপ বলেনি। তার কথাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন ভেঙে পড়া ট্রাম্প ভক্তরা।

ব্রেক্সিট বা ইংল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা করার গণভোটে প্রথমে ইইউতে থাকার পক্ষে ছিল ৪৮ শতাংশ ভোট, আর না থাকার পক্ষে ছিল ৪৬ শতাংশ ভোট। শেষ দিকে না থাকার পক্ষে জনজোয়ার তৈরি হলে ৫১ শতাংশ ভোট পড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার পক্ষে, অন্যদিকে থাকার পক্ষের ভোটে পরিবর্তন হয়নি। জরিপে দেখাচ্ছিল ৪৮ শতাংশ, ভোটও পড়ে ৪৮ শতাংশ।

‘যুক্তরাষ্ট্রে ব্রেক্সিট ভোটের প্রতিফলন দেখা যাবে শুধুমাত্র, যদি ট্রাম্পের পক্ষে সর্বদল মত এবং মাঠ পর্যায়ে জনজোয়ার তৈরি হয় এই বাকি ১৭-১৮ দিনে। কিন্তু রিপাবলিকান দল নিজেই তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না, তাই এটা বলা চলে বেশ অসম্ভব এই মুহূর্তে’ বলেছিলেন, ফক্স নিউজের ডিসিশন ডেস্ক পরিচালক আর্নন মিশকিন।

তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে কোনো নির্বাচনে জরিপ ফলাফল উল্টে যায়নি। তবে হ্যাঁ, দেখতে হবে বাকি ১৭ দিনে জরিপে পরিবর্তন আসে কিনা। যদি দেখা যায় জনজোয়ার তৈরি হচ্ছে সেটা জরিপেই বোঝা যাবে। তবে এটা সত্য যে কোনো জরিপ ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি ভোট ওলট-পালট করতে পারেনি।’

‘আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে, যদি ৮ নভেম্বর হিলারির কর্মী সমর্থক আর ভোটাররা জয় পেয়ে গেছেন ভেবে বাড়িতে বসে কাটিয়ে দেন, তাহলেও ট্রাম্পের ভোট বেড়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কেননা, ট্রাম্পের ঘরে থাকা ৩৫-৪০ শতাংশ ভোটার, তারা ঘরে বসে থাকবেন না ভোটের দিন’ আর্নন তার ম্যাপ বিশ্লেষণে এমনটায় বলেছিলেন।

এই যখন ঘর অর্থাৎ ফক্স নিউজের আলোচনা তখন, নির্বাচনী বিতর্কের ২ দিনের মাথায় দৃশ্যত: মনে হয়েছে, পরাজয় মেনে নেওয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাউথ ক্যারোলিনার জনসভায় ট্রাম্প বলেছেন, আমি জানি না জয় আসবে না পরাজয় আসবে, তবে অধিক সংখ্যায় ভোটার মাঠে নামলে জয় সুনিশ্চিত। তাই এই ১৮ দিন দিনরাত জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর অঙ্গীকার করে ট্রাম্প বলেছেন, এবার যদি জয় নাও আসে, তবুও প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে তার রেশ থাকবে আগামী ২০ থেকে ৪০ বছর। তার নির্বাচনী প্রচারণাকে সত্যিকারের দেশরক্ষার আর ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা গঠনের একটি আন্দোলন বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, এই নির্বাচনেই সব শেষ হয়ে যাবে না, এটা একটা আন্দোলনে রুপ নিয়েছে।

এদিকে, দক্ষতা আর সততা কিংবা বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ভোটারদের অনেক প্রশ্ন আছে বলে স্বীকার করে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, শুধু একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নয়, ভাবুন দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান আপনারা। তারপর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের সঙ্গে কোন প্রার্থী মেলে, সেটা বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওহাইয়োর ভোটারদের। অগ্রিম ভোট শুরু হওয়ায় এরই মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে জানিয়ে হিলারি বলেন, এই নির্বাচন আসলেই মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, ২০১২ সালের চেয়ে এবার এরই মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন যা ইতিবাচক লক্ষণ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন