আসামে বাংলা ভাষা আন্দোলনে নিহতরা পেলেন মর্যাদা

  10-12-2016 01:36AM

পিএনএস ডেস্ক : আসাম রাজ্যের বরাকে বাংলা ভাষা আন্দোলনে নিহতদের শেষমেশ শহীদের মর্যাদা দিতে চলেছে ভারত সরকার।
১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে যে শিলচর স্টেশনে আর তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আসাম পুলিশের গুলিতে এক নারীসহ ১১ জন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইতে, সেই রেল স্টেশনটির নাম এবার হতে চলেছে ভাষা শহীদ স্টেশন।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্টেশনের নাম বদলে তাদের সম্মতি জানিয়েছে। এবার আসাম সরকারকে আনুষ্ঠানিক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্টেশনটির নাম বদল করতে হবে।
বরাকের মানুষ ২০০৫ সালে প্রথম দাবি তুলেছিলেন যে বাংলা ভাষার আন্দোলনের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, সেই শহীদদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য স্টেশনটির নামকরণ হোক ভাষা শহীদ স্টেশন।
শিলচরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ এই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে। রাজ্য স্তর থেকে শুরু করে একের পর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছেও তারা আবেদন জানিয়েছে।
শেষমেশ তারা এবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেশনের নাম বদলের চূড়ান্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছিল। তার আগেই সরকারি বার্তা এসে পৌঁছেছে আসাম সরকার আর সাংস্কৃতিক মঞ্চের কাছে।
শুধুমাত্র মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে বা চিঠি পাঠিয়ে কাজ না হওয়ায় গত বেশ কয়েক মাস ধরে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকেই নির্বাচিত স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে ট্যাগ করে নিয়মিত টুইট করতে শুরু করেছিলেন। সপ্তাহে অন্তত তিনটি টুইট করা হতো।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের আহ্বায়ক রাজীব কর বলেছেন, ‘একটা সময়ে এক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাদের দাবী নাকচই করে দিয়েছিলেন এটাকে 'আঞ্চলিক দেশপ্রেম' বলে অভিহিত করে। তার পরেও আমরা হাল ছাড়ি নি। লাগাতার দাবী জানিয়ে গেছি। সেই ২০০৫ সাল থেকে লড়াই করতে করতে এতদিনে ভাষা শহীদদের মর্যাদা দিল কেন্দ্রীয় সরকার।’
চূড়ান্ত মতামত দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য আসাম সরকার আর স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়েছে যে স্টেশনের নাম বদল হলে কোনো আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হবে কী না, বা অন্যান্য ভাষাভাষীর মানুষ ব্যাপারটাকে কীভাবে নেবেন তা নিয়ে।
‘এই একটা ইস্যুতে বরাকের প্রত্যেকটা ভাষাভাষী মানুষ, রাজনৈতিক দল এক সুরে কথা বলেছে,’ জানাচ্ছিলেন মি. কর।
আসামের সরকার বাংলাভাষী এলাকা বরাক উপত্যকাতেও অসমীয়াকে আনুষ্ঠানিক ভাষা বলে ঘোষণা করায় দলমত নির্বিশেষে বরাকের বাসিন্দারা আন্দোলনে নেমেছিলেন।
১৯৬১ সালের ১৯মে বরাকে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেদিনই মিছিল চলাকালে আসামের পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে নির্বিচারে।
মোট এগারোজন মারা গিয়েছিলেন সেদিন। আর তারপরে আন্দোলনকারীরা দমে না গিয়ে শেষমেশ সেই সরকারী ঘোষণা প্রত্যাহার করিয়েই ছেড়েছিলেন।
তারপরেও চারটি ঘটনায় নিজের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে আরো চারজনকে
তারপর থেকেই আসামের একটি ডিভিশন হওয়া সত্ত্বেও বরাকের কাছাড়, হাইলাকান্দি আর করিমগঞ্জের সরকারী কাজের ভাষা এখন বাংলা।
সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন