ব্রিকস বয়কট করলে একঘরে হয়ে পড়বে ভারত

  24-08-2017 11:02AM


পিএনএস ডেস্ক: চীন-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে আগামী ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর চীনে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যোগদানের সম্ভাবনা দ্রুত কমে আসছে।

চীনা বা ভারতীয় মুখপাত্রের কেউই মোদীর যোগদান নিশ্চিত করেননি। মোদীর অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চীনা মুখপাত্র হুয়া চুনিইঙ অবশ্য বলেছেন, শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের যোগদান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আর ভারতের মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেছেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।

অবশ্য, মোদীর অংশগ্রহণ নিয়ে সরাসরি কোনো উল্লেখ ছাড়াই চীনা মুখপাত্র হুয়া আবারো চীনা অবস্থান ব্যক্ত করে বলেছেন, ভারতকে অবশ্যই দোকলাম থেকে নিঃশর্তভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, ওই বিরোধ নিষ্পত্তির পূর্বশর্তই হলো এটা।

আগামী ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর উপকূলীয় নগরী জিয়ামেনে উদীয়মান পাঁচটি দেশকে (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও সাউথ আফ্রিকা- ব্রিকস) নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনটি হবে।

সম্প্রতি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) চেয়ারম্যান সুধীন্দ্র কুলকার্নি কুইন্টে এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ সম্মেলনে না গিয়ে জুনিয়র কাউকে পাঠাতে পারেন। কিংবা ভারত পুরোপুরি শীর্ষ সম্মেলন বয়কটও করতে পারে।

তবে এটা চীনকে মারাত্মকভাবে অসন্তুষ্ট করবে। কুলকার্নি উল্লেখ করেছেন, শীর্ষ সম্মেলনের ভেন্যু জিয়ামেনের অবস্থান হলো চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে। এখান থেকে তাইওয়ান দেখা যায়। এ কারণেও সম্মেলনটি প্রেসিডেন্ট শির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘এটা শির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ১৯৮৫ সালে নগরীর ডেপুটি মেয়র হয়ে এখান থেকেই তিনি কার্যকর নেতা হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারপর ২০০২ পর্যন্ত ১৭ বছর ফুজিয়ানে কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন পদে থেকেছেন।’

তিনি বলেন, চলতি বছরের মে মাসে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ওবিওআর বৈশ্বিক সম্মেলনে উচ্চাভিলাষী ওবিওআর ভারতের বয়কট এবং এর প্রতি খোলামেলা সমালোচনা ইতোমধ্যেই ভারত-চীন সম্পর্কে ব্যাপক তিক্ততার সৃষ্টি করেছে।

ভারতের একঘরে হয়ে পড়া

মোদীকে যদি জিয়ামেনের ব্রিকস সম্মেলনে না দেখা যায় তাতে কেবল চীনা নেতৃত্বকেই আরো ক্ষুব্ধ করবে না, সেইসাথে উদীয়মান বিশ্বের বাকি অংশ থেকেও ভারত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

কুলকার্নি বলেন, ‘এমনকি রাশিয়া পর্যন্ত ব্রিকস বয়কট ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন করছে না।’

ব্রিকসের প্রতি ভারতের বৈরিতার সূচনা হয়েছে এই বাস্তবতা থেকে যে, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন পেয়ে পাকিস্তান ব্রিকস-প্লাসে প্রবেশ করতে পারে।

কিন্তু পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার কোনো ভিত্তিই নেই। মাত্র দুই মাস আগে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গ্যানাইজেশনে (এসসিও) এসসিও-প্লাস হিসেবে পাকিস্তান প্রবেশ করেছে। কেবল পাকিস্তান নয় ভারতও নতুন সদস্য হিসেবে আস্তানা সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। ‘বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানকে নিঃসঙ্গ’ করার মোদী সরকারের দাবিই এতে ফাঁকা বুলিতে পরিণত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে কুলকার্নি বিদ্রুপ করেছেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন ব্রিকস-প্লাস নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, তখনই মোদীকে বাদ দিয়ে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সম্ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে।

চলতি বছরের জুনে বেইজিংয়ে পাঁচ জাতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের (তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাতে উপস্থিত হননি) বৈঠকে বক্তৃতাকালে শি আস্থার সাথে বলেন, ব্রিকস সহযোগিতার দ্বিতীয় দশকের সূচনায় চীন ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ মিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। চীন ইতোমধ্যেই ব্রিকস-প্লাস সহযোগিতার ধরন ও আকার নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।

কুলকার্নি বলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়িও ব্রিকস-প্লাস আইডিয়া পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, চীন অন্যান্য উদীয়মান প্রধান দেশের সাথে সংলাপ চালিয়েছে, ব্রিকসকে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে তৈরি করার জন্য তাদেরকে ব্রিকসমুখী করার জন্য ব্যাপক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত মনে হচ্ছে ব্রিকসের ভবিষ্যত নিয়ে তেমন আশাবাদী নয়।

কুলকার্নি আরো বলেন, ভারতের নেতা এবং প্রভাবশালী কৌশল বিশেষজ্ঞরা ক্রমবর্ধমান হারে মনে করছেন, ব্রিকস হয়ে পড়ছে চীন-কেন্দ্রিক এবং চীনা-প্রাধান্যপূর্ণ প্লাটফর্ম। অধিকন্তু, তারা ব্রিকস-প্লাসকে ক্ষতিকর মনে করছে। কারণ রাশিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন নিয়ে নতুন যেসব সদস্যকে চীন এতে সামিল করতে চায়, তার মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম।

পাকিস্তান ছাড়াও প্রধান উন্নয়নশীল দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ইরান, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন (এশিয়া থেকে), নাইজেরিয়া ও মিসর (আফ্রিকা থেকে) এবং মেক্সিকোকে (ল্যাতিন আমেরিকা থেকে) ব্রিকস-প্লাসে সামিল করতে চায় চীন।

কুলকার্নি বলেন, ব্রিকসে সম্ভাবনাময় নতুন দেশের অন্তর্ভুক্তি (জনসংখ্যার আকার এবং সম্ভাবনাময় প্রবৃদ্ধির আলোকে এসব দেশকে সম্মিলিতভাবে নেক্সট ইলেভেন হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে) সংগঠনটিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আকাঙ্খার আরো বেশি প্রতিনিধিত্বশীল করে তুলবে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো ব্রিকস-প্লাস সংগঠনটিতে ভারতের অবস্থান খর্ব করবে এবং একইসাথে চীনের অবস্থান বাড়াবে, তার ভূমিকা জোরদার করবে।

উদ্ধারের উপায় কী?

তবে ভারতের সবকিছু খোয়া যায়নি। অবশ্য চীন ও ভারতকে তিনটি কাজ অবশ্যই করতে হবে বলে কুলকার্নি পরামর্শ দিয়েছেন : ১. তাদেরকে ভুটান-চীন-সিকিম ত্রিপক্ষীয় সীমান্তে থাকা দোকলামের সীমান্ত সমস্যাটির সমাধান করতে হবে; ২. বিআরআইয়ে ভারতকে অবশ্যই ‘সমান অংশীদার’ করে নিতে হবে চীনকে এবং ৩. ভারতকে অবশ্যই চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরকে (সিপিইসি) অনুমোদন করতে হবে এবং পূর্বে ভারত পর্যন্ত এবং পাকিস্তানের পশ্চিম দিকের দেশগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, মৌলিক সীমান্ত ইস্যুর সমাধান এবং ভারতকে সমান অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করা হলে বিআরআই হবে ‘সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভূক্তিমূলক, পরামর্শমূলক ও অংশগ্রহণমূলক এবং তা হবে সবার জন্য জয়ের আবহ-সংবলিত কল্যাণকর।’

কুলকার্নি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার একীভূত হওয়ার জন্য এটা হবে ইতিহাসের বৃহত্তর লক্ষ্য। এটা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গরিব মানুষকে দারিদ্র্য ও অনুন্নয়ন থেকে মুক্তি দেবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন