নতর্কীকে ঘিরেই পার্ক সার্কাসে গোলাগুলি

  24-08-2017 01:07PM

পিএনএস ডেস্ক: গত সোমবার রাতে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এ ঘটনায় সিন্ডিকেটের গোলমাল তো ছিলই। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ কলসেন্টার ও এক লাস্যময়ী যুবতী। যুবতীকে নিয়ে গত শনিবার গোলমাল হয় দুই গোষ্ঠীর। আর তার জেরেই সোমবার রাতে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে চলে গুলি।

প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লাস্যময়ী পানশালার নতর্কীকে কেন্দ্র করেই এই গোলমালের সূত্রপাত। শনিবার সেই লাস্যময়ীকে নিয়েই পার্ক স্ট্রিটের এক নামকরা নৈশক্লাবে ‘স্যাটার-ডে নাইট পার্টি’ করতে যায় লুল্লা হায়দার ও চাটনি পারভেজরা। সেই একই নৈশক্লাবে যায় মহম্মদ শাহবাজ, আলতাফ, মিরাজুল, ফইজুলরা। সেখানেই হায়দারদের দেখে কটূক্তি করতে শুরু করে শাহবাজরা। এমনকী ডান্স ফ্লোরে থাকার সময় হায়দারের সঙ্গিনীর শরীর স্পর্শ করে শাহবাজরা। যা দিয়েই উত্তাপ চড়ছিল নৈশক্লাবে। এরপর হায়দারের উদ্দেশে শাহবাজরা কটাক্ষ করে বলে ‘ছোকরি লে কর আয়া হ্যায়’। অশালীন ভাষায় নর্তকীকেও নাকি কটূক্তি করা হয়। তাতেই গোলমাল বাড়ে।

পানশালার নিরাপত্তারক্ষী ও বাউন্সাররা দু’পক্ষকে আটকানোর চেষ্টা করে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ। নৈশক্লাবে উপস্থিত অনেকেই দাবি করেছেন, সেদিন রাতে দু’পক্ষই পার্টিতে এসেছিল আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নিয়ে। যা নিয়ে পুলিশের মনেও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এরপর পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ বিষয়টি সামাল দিতেই এলাকা ছাড়ে দুই গোষ্ঠী। যাওয়ার আগেই একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই লাস্যময়ীকে পছন্দ করত শাহবাজের গ্যাংয়ের কোনও সদস্য। সেই টানাপোড়েন থেকেই এই গুলি চালানোর ঘটনা। তবে ওই পানশালার নর্তকী কলসেন্টারে পার্টটাইম কাজও করত বলে জানা গিয়েছে।

শনিবার রাতে নতুন করে কোনও গোলমাল না হলেও একে অপরকে দেখে নেওয়ার পরিকল্পনা নিতে শুরু করে বলে পুলিশ জেনেছে। এরপরই রবিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ পার্ক সার্কাসের লেডিস পার্কের কাছে মহম্মদ শাহবাজকে মারধর করে হায়দার ওরফে জাফর আহমেদ ও তার তিন সঙ্গী। এই ঘটনা কানে যেতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শাহবাজের সঙ্গী আলতাফ, মিরাজুল, ফইজুলরা। তারা শাহবাজকে জানায় এই ঘটনার মাশুল দিতে হবে হায়দারদের। কারণ এই আক্রমণ শুধু শাহবাজের উপর নয়। আক্রমণ হয়েছে তাদের উপরেও। এই ঘটনার পর থেকেই হায়দারদের উপর নজর রাখতে শুরু করে ফইজুলরা।

সোমবার গোটা দিন হায়দারদের সব গতিবিধির ওপর নজর রাখেন তারা। কিন্তু দিনের আলোয় হামলা করা যাবে না বলেই বেছে নেওয়া হয় সোমবার রাতকে। রাত দশটা নাগাদ অনেকটা সিনেমার কায়দায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের পিছনে মেহের আলি রোড ধরে প্রচণ্ড গতিতে আসে চারটি বাইক। আরোহীর সংখ্যা ছিল আট। পাঁচ নম্বর বাড়িটির সামনে বাইকগুলির গতি কমে আসে। ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিল হায়দার আহমেদ ওরফে লুল্লা হায়দার ও তার সঙ্গী পারভেজ। চলন্ত বাইক থেকেই গুলি চালানো হয়। লুকিয়ে পড়ার আগেই দু’টি গুলি হায়দারের হাতে ও একটি পায়ে লাগে। পারভেজের হাতে লাগে দু’টি গুলি। গুলি চালিয়ে ট্রামলাইনের দিকে পালায় তারা। রক্তাক্ত অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হায়দারদের। হায়দারের ভাই মিন্টু আহমেদের দাবি, ১৯ রাউন্ড গুলি চলেছে। যদিও পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ রাউন্ডের বেশি গুলি চালানো হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, পূর্ব কলকাতার কুখ্যাত দুষ্কৃতী এই লুল্লা হায়দার ও তার সঙ্গী চাটনি পারভেজ। অপর দিকে রয়েছে শাহবাজদের গ্যাং। মিরাজুল, আলতাফদের সঙ্গে লুল্লা হায়দারদের গোলমাল বহুদিনের। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে মিরাজুল, আলতাফদের সঙ্গে লুল্লা হায়দারদের গোলমাল ছিল অবৈধ কলসেন্টার ও সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে। পার্ক সার্কাসে ট্রামলাইনের দু’পাড়ে দুই গোষ্ঠীর ব্যবসা করার পাশাপাশি তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এরা অবৈধ কলসেন্টার খুলে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দাদের প্রতারণা করে ডলার কামাত। গত দেড় বছর ধরে চলছিল এই অবৈধ কলসেন্টারের ব্যবসা। তা নিয়েও ছিল রেষারেষি। আর এবার সেই রেষারেষি বাড়ল লাস্যময়ীকে কেন্দ্র করে।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন