মারা পড়বে ৯০ ভাগ মার্কিনি!

  18-10-2017 02:37PM

পিএনএস ডেস্ক: উন্মাদ, যুদ্ধবাজ, একনায়ক। এসব নেতিবাচক তকমাই জুটেছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উনের। তবে সেনানায়ক হিসেবে অনেকেরই অবজ্ঞার পাত্র তিনি। কৌশলগত অবস্থান বুঝে হামলা চালানোর বিচক্ষণতা নাকি তার নেই। এমনটাই দাবি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তবে দাবার ছকে ঘুঁটি সাজানোতে কম যান না তিনি, এবার সেটাই প্রমাণ করলেন কিম।

সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সেনা তৈরি করেছে এক ভয়ানক অস্ত্র। আমেরিকার মতো মহাশক্তিকেও যা হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ওই অস্ত্রের হামলা হলে মৃত্যু হবে ৯০ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের। এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন খোদ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাই। মার্কিন কংগ্রেসে তারা জানিয়েছেন, কিমের সেনার হাতে রয়েছে ‘ইএমপি’ বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস বোমা। ইএমপি কমিশনের সাবেক প্রধান উইলিয়াম গ্রাহাম জানান, পারমাণবিক মিসাইলের মদতে আমেরিকার উপর ‘ইএমপি’ হামলা চালাতে পারে উত্তর কোরিয়া।

ওই বোমার ভয়াবহতার বর্ণনা করে গ্রাহাম জানান, ‘ইএমপি’ বোমার বিস্ফোরণে সৃষ্টি হবে শক্তিশালী তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের। ওই তরঙ্গের আঘাতে বিকল হয়ে যাবে আমেরিকার পাওয়ার-গ্রিড। আর তা হলে বিমান, রেল, ব্যাংক ও হাসপাতালের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়বে। কম্পিউটার বিকল হয়ে ঘটবে হাজার হাজার দুর্ঘটনা। আকাশ থেকে ভেঙে পড়বে প্লেন। সিগনাল না পেয়ে ঘটে যেতে পারে রেল দুর্ঘটনা। ব্যাঙ্কের সমস্ত তথ্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ভেঙে পড়বে অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুর মুখে পড়বে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ। মার্কিন নিরাপত্তামহলে উদ্বেগ বাড়িয়ে তিনি আরও দাবি করেছেন যে আমেরিকার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কিমের মিসাইল থামাতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম নয়।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েকবছর আগেই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের সামরিক প্রয়োগ নিয়ে গঠন করা ইএমপি কমিশন ভেঙে দেয় আমেরিকা। এরপরই এই রিপোর্টে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। অভিযোগ, ইএমপি হামলার আশঙ্কা সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সম্প্রতি চরমে পৌঁছেছে ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং দ্বৈরথ। যেকোনো মুহূর্তে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হওয়ার কথাও বলেছেন কিম জং উন।


যেকোনো মুহূর্তে বাধতে পারে পরমাণু যুদ্ধ, বলছে উত্তর কোরিয়া
কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে চরম সীমায় পৌঁছেছে, যেকোনো মুহূর্তে বেধে যেতে পারে পরমাণু যুদ্ধ। গতকাল জাতিসঙ্ঘে দাঁড়িয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন উত্তর কোরিয়ার উপ রাষ্ট্রদূত কিম ইন রিয়ং।

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের নিরস্ত্রীকরণ কমিটিকে কিম বলেছেন, উত্তর কোরিয়া বিশ্বের একমাত্র দেশ যাদের সেই ৭০-এর দশক থেকে সারাক্ষণ সরাসরি পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে চলেছে আমেরিকা। তাই তাদেরও আত্মরক্ষার্থে পরমাণু অস্ত্র তৈরির অধিকার রয়েছে। তার অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে সারাক্ষণ গোপনে ছক কষে চলেছে আমেরিকা। তারা প্রতি বছর পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে সামরিক মহড়া করে। কিন্তু এই ছক আরও বিপজ্জনক।

তাই বাধ্য হয়ে উত্তর কোরিয়াও গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার। তাদের রয়েছে পরমাণু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, নানা পাল্লার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল। কিমের হুঁশিয়ারি, গোটা আমেরিকা ভূখণ্ড তাদের অস্ত্রের আওতায় পড়ে, যদি তারা উত্তর কোরিয়ার জমির ১ ইঞ্চিও দখলের চেষ্টা করে, তবে বিশ্বের যেকোনো এলাকায় গিয়ে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

আমেরিকা অবশ্য দাবি করেছে, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তিরক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছে তারা। তাদের কথায়, প্রথম বোমা না পড়া পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবে উত্তর কোরিয়া সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হবে।

রুশ প্রেসি়ডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকালই জানিয়েছেন, তার দেশ জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা মেনে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আর্থিক, বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য সম্পর্কে কাটছাঁট করছে। পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নও নতুন করে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে।

পিয়ংইয়ং পরিষ্কার করে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক দুনিয়া যতই চাপ দিক, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথে তারা হাঁটবে না। উত্তর কোরিয়া গোটা দুনিয়া থেকে পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূলকরণের পক্ষে। কিন্তু যতক্ষণ না আমেরিকা সেই পথে হাঁটছে ও উত্তর কোরিয়াকে হুমকি দেওয়া আর ব্ল্যাকমেল করা বন্ধ করছে, ততক্ষণ তাদের পক্ষেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ মেনে নেয়া সম্ভব নয়। বলেছে পিয়ং ইয়ং।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন