কাশ্মীরিরা চায় নিজের স্বাধীন দেশ

  14-09-2019 04:39PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখী। পর্যবেক্ষকসহ অনেকেই বলছেন, দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন। দুই দেশই একে অপরের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করছে।সীমান্তজুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।এতে সীমান্তবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকরা চলমান জবরদখলকে মেনে নিতে পারছে না।

মুসলিম প্রধান রাজ্য কাশ্মীর এবং নানা কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন সময় কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এসব কারণে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরেকটি যুদ্ধ হয় ১৯৯৯ সালে। এ যুদ্ধের নাম কার্গিল যুদ্ধ। দুটি যুদ্ধে উভয় দেশ চরম মূল্য দেয়। এর পর দীর্ঘদিন অম্লমধুর সম্পর্ক তাদের মধ্যে বিদ্যমান। থেকে থেকে উত্তেজনা বাড়ে-কমে। আবার কখনো হয় শীতল।

আজ থেকে ৩৯ দিন আগে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে নিয়ে এটিকে কব্জা করে নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে জারি করে কার্যুেূ। দেওয়া হয় সেনা টহল। এসব করা হয় এখানের নাগরিকদের ইচ্ছার স্পণূর্ণ বিরুদ্ধে। সেখানে ৩৯ দিন যা চলছিল, সেটাকে বলা হচ্ছে দাবনীয় শাসন।কাশ্মীরের নাগরিকরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল। তারা কারো অধীন থাকতে রাজি নয়। তারা চায় আলাদা রাষ্ট্র। নিজের দেশ।

গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখানে ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। ধরপাকড় করে ৪ হাজার স্বাধীনতাকামি বা মুক্তি সংগ্রামীকে আটক করে। দমন-পীড়ন চলে অবাধে।এতদিন ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি তাদের। হাট-বাজারগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব মিডিয়া। টেলিফোন, ফোবাইল ফোন থেকে শুরু করে সব যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অবশেষে আজ থেকে জম্মু-কাশ্মীরের ৩৯ দিনের অসহনীয় দুর্ভোগের দৃশ্যমান উন্নতি ঘটে। তুলে নেওয়া হয় এতদিনের আইনি খগ্ড়। কেন্দ্র সরকারের সূত্রে প্রকাশ, এখন থেকে সেখানের নাগরিকরা তাদের ইচ্ছেমতো সব করতে পারবে। নাগরিকদের মতে, আইনের খগ্ড় তুলে নেয়া হয়েছে বটে, তবে এতদিনের সাঁড়াসি আক্রমণের ধরন ও আচরণের সামান্যতম পরিবর্তন ঘটেনি।


ঐতিহাসিক সত্য হলো, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন, অথবা তাঁরা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসন কাজ চালাতে পারবেন। ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার বিদ্রোহী নাগরিক এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে।

কাশ্মীরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেও গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাছে সহায়তা চান। কাশ্মীরের রাজা ভারতভুক্তির পক্ষে স্বাক্ষর করবেন, এই শর্তে মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরকে সাহায্য করতে রাজি হন।১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২৭ অক্টোবর তা ভারতের গভর্নর জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়। চুক্তি সই হওয়ার পর, ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।


এসব কারণে ভারত বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে তোলে। রাষ্ট্রসংঘ ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের অধিকৃত এলাকা খালি করে দিয়ে রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটের প্রস্তাব দেয়। ভারত প্রথমে এই প্রস্তাবে রাজি ছিল। কিন্তু ১৯৫২ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচিত গণপরিষদ ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দিলে হেরে যাওয়ার ভয়ে ভারত গণভোটের বিপক্ষে মত দেয়।

ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্রসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধানে আসে। এই গোষ্ঠীর কাজ ছিল, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা ও তদন্তের রিপোর্ট প্রত্যেক পক্ষ ও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের কাছে জমা দেওয়া। যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে কাশ্মীর থেকে উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ভারত গণভোটে রাজি হয়নি এবং এজন্য পাকিস্তানও সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়নি।

ভারত গণভোট আয়োজনে রাজি হয়নি এ কারণে যে, এটা নিশ্চিত ছিল যে গণভোটে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের বেশির ভাগ ভোটারই পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেবে ও এতে কাশ্মীরে ভারত ত্যাগের আন্দোলন আরো বেশি জোড়ালো হবে। এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে ভারত জম্মু কাশ্মীরে তাদের প্রভুত্ব বজায় রাখার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ছলনার আশ্রয় নেয়।

ঐতিহাসিক মতে, জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে, তারা কারো সঙ্গে যাবে, না নিজেরা স্বাধীনভাবে বাঁচার সুযোগকে বেঁচে নেবে। তাদের সে সুযোগ না দিয়ে ভারত যেটা করেছে, সেটা বে-আইনি, জবরদখল। এতে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বিরাজমান। আবার তারা এতে আন্তর্জাতিক সমর্থনও পাচ্ছে।

দুটি দেশই অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত। আর্থিক দিক দিয়েও তারা কাবু। দুটি দেশেই বিচ্ছিন্নতার সুর শুধু বাজছে না, লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত। এদিক দিয়ে ভারতের যে ৭টি রাজ্য স্বাধীনতার জন্য এতদিন সোচ্চার ছিল, মোক্ষম সুযোগ বুঝে সেগুলোর স্বাধীনতাকামিরা গর্জে উঠবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। জম্মু কাশ্মীরে সাম্প্রতিক পরিণতি, ওই জাতি-গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দিচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

আমরা নিজেরাও নানা সমষ্যায় আছি। আরাকানের রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়েছে। ভারত ও্ আসামের কজন নেতার সাম্প্রতিক কিছু সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় আবারও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে বাংলাদেশীদের অবস্থান কী হবে, সে এক বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। ভারত, পাকিস্তান, চীন- কারো অধীন নয়, কাশ্মীরিরা নিজের স্বাধীন দেশ চায়।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন