পপ তারকা থেকে যেভাবে ইসলামি বক্তা

  09-12-2016 05:49AM



পিএনএস ডেস্ক : জুনায়েদ জামশেদকে অনেক পাকিস্তানিই নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় ও অন্যতম পপ তারকা হিসেবে মনে করেন। ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ‘তুম মিল গায়ি’, ‘সাওয়ালি সালোনি’ কিংবা ‘উহ কৌন থি’ গানগুলো নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানিদের মুখে মুখে ছড়িয়ে ছিল।
‘ভাইটাল সাইন’স নামক ওই সময়ের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড দলের গান গেয়ে জামশেদ নিজেকে জনপ্রিয় পপ তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন । পরবর্তীতে তিনি নিজেকে জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও ইসলামি সংগীতশিল্পীতে পরিণত করেন। দ্য মুসলিম ৫০০ নামের একটি ওয়েবসাইট তাকে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
বুধবার চিত্রল থেকে ইসলামাবাদ ফেরার পথে ৫২ বছরের জুনায়েদ স্ত্রীসহ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। পপ গানের শিল্পী হিসেবেই তাকে এক সময় পাকিস্তানিরা চিনলেও তিনি কখনো সংগীতকে পেশা হিসেবে নিতে চাননি। গান গাওয়ার সময়েই তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলেন। চোখের দৃষ্টিজনিত সমস্যার কারণে তার এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বিমানবাহিনীতে অল্প কিছুদিন বেসামরিক ঠিকাদার হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
ভাইটাল সাইন ব্যান্ড দলটি গঠন করেছিলেন নুসরাত হোসাইন ও রোহাইল হায়াত। জুনায়েদ যোগ দেওয়ার পর ব্যান্ডটি পূর্ণতা পায়। একটি কনসার্টে ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সঙ্গে জুনায়েদের পরিচয় হয়।
জুনায়েদ জামশেদের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। পরে ব্রডকাস্টার ও প্রযোজক শোয়েব মনসুর ব্যান্ডটিকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। মনসুরের সহযোগিতায় ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম মুক্তি পায়। ভাইটাল সাইনস ১ শিরোনামের ওই অ্যালবামের দিল দিল পাকিস্তান গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। দেশজুড়ে ভাইটাল সাইন ও জামশেদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এই খ্যাতিও জামশেদ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়নি। ১৯৯০ সালে তিনি লাহোর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন।
কোনো ধরনের প্রচার ও বিজ্ঞাপন ছাড়াই অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পর জামশেদ নিজেকে ভাইটাল সাইনস থেকে সরিয়ে নেন। নিজের একক ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগী হয়ে পড়েন। আর ভাইটাল সাইনটি তাদের ভূমিকার জন্য জাতীয় পর্যায়ে কখনো মূল্যায়িত হয়নি।
তবে জামশেদের একক ক্যারিয়ার সহজ হয়নি তার জন্য। ২০০০ সালের কিছু পর তাকে প্রকাশ্য মঞ্চে আর গান গাইতে দেখা যায়নি। গুঞ্জন রয়েছে, এ সময় তিনি আর্থিক সংকটে ছিলেন। অবশেষে ২০০০ দশকের মাঝামাঝি জামশেদকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। এ সময় জামশেদ ইসলামে গানের অবস্থা জেনে সংগীত ছেড়ে দেন এবং ইসলামি জীবন-যাপনের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন।
জামশেদের দীর্ঘদিনের বন্ধু মনসুর এক সাক্ষাৎকারে গানকে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা ও ভক্তদের সংশয়ে ফেলার জন্য জামশেদের সমালোচনা করেছিলেন। তবে তার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছেন, ঘরোয়া আড্ডায় গান গাওয়া এড়াতে পারতেন না জামশেদ।
জামশেদের জীবনে দুটি ধারা ছিলো। তাকে উভয় ক্ষেত্রেই প্রশংসনীয়ভাবেই স্মরণ করা হয়। ৫২ বছরের দীর্ঘ জীবনের শেষ দিকে তিনি ধর্ম প্রচার করেছেন, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ধর্মীয় বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ২০১৬ সালে ধর্ম অবমাননার জন্য ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছিলেন জামশেদ।
তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ‘সওলি সালোনি’, ‘ইয়ে শাম’, ‘এইতবার’, ‘তুম দূর থা’, ‘কেহ দো জো বি’ ও ‘না তু আয়েগি’। ১৯৯৪ সালে জুনায়েদের প্রথম একক অ্যালবাম ‘জুনায়েদ অব ভাইটাল সাইনস’ মুক্তি পায়। যা দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ১৯৯৯ সালে ‘উস রাহ পার’ এবং ২০০২ সালে ‘দিল কি বাত’ মুক্তি পায়। ২০০৪ সালে সংগীত জীবন সমাপ্তির ঘোষণা দেন। পরে ২০০৫ সালে ইসলামি সংগীতের অ্যালবাম ‘জালওয়া-এ-জানান’ প্রকাশ করেন।
এছাড়া ২০০৬ সালে ‘মেহবুব-এ-ইয়াজদান’, ২০০৮-এ ‘বদর-উদ-দুজা’ ও ২০০৯ ‘বাদি-উজ-জামান’ নামে ইসলামি সংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ করেন জুনায়েদ।
সূত্র: ডন, জিও টিভি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন