প্রধান বিচারপতিকে ‘রাজাকার’ বলার স্বপক্ষে মানিকের জবাব

  28-03-2017 06:44AM


পিএনএস ডেস্ক: একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘রাজাকার’ বলায় আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে পাঠানো এক লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিয়েছেন তিনি।

সোমবার আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ডাকযোগে এ নোটিশের উত্তর পাঠান।

এর আগে গত ১৬ মার্চ সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে নোটিশটি পাঠিয়েছিলেন আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া। তখন সাবেক বিচারপতি মানিককে নোটিশের জবাব বা তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে ৭২ ঘণ্টা সময় দেন ওই আইনজীবী। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে তখন উল্লেখ করা হয়।

নোটিশের উত্তরে সোমবার সাবেক এ বিচারপতির পক্ষে তার জবাব দেয়া হয়।

নোটিশের জবাবে বলা হয়, ‘ইহা সত্য যে আমার মক্কেল (সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকে) গত ১৫ মার্চ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শো ‘রাজকাহন’ এ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯৭১ সালে কুখ্যাত শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করেছেন যে ১৯৭১ সালে তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এটা প্রধান বিচারপতির সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিজস্ব মতামত।’

২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আমার মক্কেল সাবেক বিচারপতি মানিকসহ মোট চারজন বিচারপতির সমন্বয়ে আপিল বিভাগের বেঞ্চ ( যেখানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রিজাইডিং জজ ছিলেন) যখন যুদ্ধাপরাধী মুহুম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল শুনছিলেন তখন প্রকাশ্য এবং জনাকীর্ণ আদালতে (বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন) বিচারপতি এস কে সিনহা প্রকাশ্যে, সুস্পষ্ট ও জোরালোভাবে স্বীকার করেন যে, তিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি এক পর্যায়ে আরো বলেন, ‘আমি নিজেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করেছি।’

তার এরূপ স্বীকারোক্তি শুনে উপস্থিত সকলে হতবাক ও বিহ্বল হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আদালতে চাপা গুঞ্জন শুরু হলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।’

প্রধান বিচারপতির এ আত্মস্বীকৃত বক্তব্য পরের দিন (১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪) বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে ডেইলি ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় ২য় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে এটি প্রকাশিত হয়। যার শিরোনাম ছিল "Justice Sinha discloses his role in 1971". এর কিছুদিন পর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় তার উপ-সম্পাদকীয়তে লিখেন যে, বিচারপতি এস কে সিনহা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এ মর্মে স্বীকারোক্তির পর বাংলাদেশের কোনো আদালতে তিনি বিচারক হিসেবে থাকতে পারেন না। বিচারপতি এস কে সিনহার এই স্বীকারোক্তি বহুজন বিভিন্ন টকশোতে এবং টেবিলেও বহুবার আলোচনা করেছেন।

নোটিশের উত্তরে দাবি করে বলা হয়, ‘যেহেতু প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করেছেন যে তিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন তাই আমার মুক্তিযোদ্ধা মক্কেলের (সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) বক্তব্য প্রত্যাহার করার কোনোরূপ প্রশ্নই ওঠে না।’

এমতাবস্থায় আপনার (আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া) নোটিশটি প্রত্যাহারে আপনি আইনগত বাধ্য বলেও নোটিশের উত্তরে জানানো হয়।

এর আগে গত ১৬ মার্চ আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া তার নোটিশে জানায়, ১৫ মার্চ রাত ১১টায় বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজ এ নবনিতা চৌধুরীর সঞ্চালনায় টকশো ‘রাজকাহন’ অনুষ্ঠানে আপনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯৭১ সনে শান্তি কমিটির আত্মস্বীকৃত সদস্য, স্বাধীনতাবিরোধী এবং একজন রাজাকার বলে বক্তব্য প্রদান করেছেন। যাহা দেশ বিদেশে কোটি কোটি দর্শক দেখেছেন। টকশোতে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

আরো বলা হয়, ‘আপনার বক্তব্য অনুযায়ী একটি সাংবিধানিক পদে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি যদি রাজাকার হয়ে থাকেন তাহলে এই বিজয়ের মাসে ৩০ লক্ষ শহীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বিবেচিত হয়। একজন রাজাকারের অধীন দেশের সমস্ত বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বার এবং বেঞ্চের মধ্যে যে সুসম্পর্ক সেটাও বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি আইনজীবী হিসেবে উক্ত আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করাও বিব্রতকর। যাহা আমার মানহানি হয়েছে বলে আমি মনে করি।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন