দেরিতে ফেরি ছাড়ায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু : ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

  30-07-2019 03:13PM

পিএনএস ডেস্ক : একজন যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এতে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটস'র চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন জনস্বার্থে এ রিট করেন। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের ওপর শুনানি হতে পারে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

রিট আবেদনে তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল এবং যেকোনো মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরি পারাপার নির্বিঘ্ন করার আর্জি জানানো হয়েছে। এতে বিবাদী করা হয়েছে নৌপরিবহন সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিআইডাব্লিউটিসি চেয়ারম্যান, যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল, মাদারীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপার, কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসাইন মিয়া এবং কাঁঠালবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।

জানা যায়, নড়াইলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তিতাস ঘোষ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হচ্ছিল। অ্যাম্বুল্যান্সটি রাত ৮টার দিক মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ১ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছে। রাত ৯টার দিকে কুমিল্লা নামের ফেরিটি শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ভেড়ে। কিন্তু ফেরিটি ছাড়তে বিলম্ব করতে থাকে।

পরিবারের অভিযোগ, ঘাট কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল ওই ফেরিতে পার হবেন। ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়া হবে না। এ অবস্থায় রোগীর জীবন রক্ষায় স্বজনরা ফোন করেন জরুরি নম্বর ট্রিপল নাইনে। ঘাট কর্তৃপক্ষ পুলিশ সদস্যদের অনুরোধও রাখেনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর রাত পৌনে ১১টার দিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাস আসার পর ফেরি ছাড়ে। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যায় তিতাস। পরে শিমুলিয়া ঘাট থেকেই আবার ফেরিতে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে পৌঁছে তিতাসের লাশ নিয়ে নড়াইলে ফিরে যায় স্বজনরা।

তবে বিআইডাব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের দাবি, পরিবারের পক্ষ থেকে রোগীর কথা জানানো হলে তাত্ক্ষণিক অ্যাম্বুল্যান্স ফেরিতে লোড করে ১০ মিনিটের মধ্যেই ফেরি ঘাট ছেড়ে যায়।

কুমিল্লা ফেরির মাস্টার ইনচার্জ সামসুল আলম বলেন, 'ফেরিটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আসার পর ভিআইপি যাত্রীর জন্য খুব বেশি হলে আধাঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে।' বিআইডাব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাট ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, 'যুগ্ম সচিব স্যারকে পারাপার করার জন্য ঘাটে কোনো ফেরি রাখা ছিল না। তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ঘাটের কাছাকাছি চলে আসার ফোন পেয়ে কুমিল্লা ফেরিটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ সব গাড়ি লোড দিয়ে সচিবের গাড়ির জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে বলে জানতে পেরেছি।'

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, 'উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে ঘাটের ব্যাপারে আমাকে জানায়। আমি ঘাটের আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থিত ঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বলেছি যে যুগ্ম সচিব মহোদয় ফেরিতে যাবেন। তবে ফেরিতে অ্যাম্বুল্যান্স না তুলে সচিবের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।'

এদিকে, ফেরি ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় স্কুলছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহনওয়াজ দিলরুবা খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন