‘আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ হয়নি’

  23-10-2016 09:02PM

পিএনএস ডেস্ক : আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলটির ২০তম সম্মেলনে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ হয়নি। জাতি অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলো, অনিশ্চয়তার মধ্যেই থেকে গেছে। দেশের সঙ্কট নিরসন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কোনো কথা বলেননি তারা।

রোববার বিকেলে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বড় একটি উৎসব করেছে। এই উৎসবে তারা আলোকসজ্জা, উৎসবের সরঞ্জামের আয়োজন নিখুঁতভাবে হয়েছে, বিদেশী বন্ধুরা এসেছিলেন তারাও কথা বলেছেন। কিন্তু জনগণের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের যে চাহিদা তার জন্য তারা কি করেছেন? এই সম্মেলনে সেই মূল বিষয়টিই নেই। আজকে বাংলাদেশের প্রধান সঙ্কট হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা কি করবেন, তারা তা বলেনি। মানুষের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করার জন্য কি করবেন, তা তারা বলেননি। যে ভোটের অধিকার তারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন, সেই ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে কি করবেন তা তারা বলেননি।

চলচ্চিত্রকার মরহুম চাষী নজরুল ইসলামের ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচিকাঁচার মেলা মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মরহুমের চলচ্চিত্র জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। যা নির্মাণ করেছেন চাষী নজরুলের স্ত্রী জ্যোৎস্না কাজী।

জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ও মরহুমের সহধর্মিনী জ্যোৎস্না কাজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নাজমুল হক নান্নু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক দলের সাধারণ সম্পাদক মুনির খান বক্তব্য দেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিশ দলীয় জোটের নেতা এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, চলচ্চিত্রকার সাজেদুর রহমান সাজু, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার সকাল ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সমষপুর গ্রামে মরহুম চাষী নজরুলের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার পরিবারের সদস্যবর্গ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকার পরিচালক সমিতি ও জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র পরিষদ।

এসময় সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব মো: রফিকুল ইসলাম, চলচ্চিত্রকার সাজেদুর রহমান সাজু, এস আল মামুন, হান্নান মজুমদার, কাজী আসাদুজ্জামান সামন, এম এ মতিন, সেতু, চন্দন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার বিকেলের সভায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রসঙ্গে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই কাউন্সিলের আগে আমি বলেছিলাম, এই কাউন্সিল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথনির্দেশনা দেখতে পাবো। আশা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী কিভাবে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসবেন, একটি সংলাপের ব্যবস্থা করবেন, কিভাবে বিরোধী দলের সঙ্গে একটি সমঝোতা করা যায় সেই ব্যাপারে কথা বলবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটি পাইনি। জাতি অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলো, অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে গেছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা ভুলে যাইনি। সেখানে শতকরা ৫ ভাগ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ১৫৩ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে। যে বিরোধী দল করা হয়েছে সেই বিরোধী দলকে কেউ গুরুত্ব তো দেয় না, সরকারও গুরুত্ব দেয় না। তাদের তিনজন সদস্য সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য। সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলে বিরোধী দলের নামে অদ্ভুত জিনিস জাতির সামনে হাজির করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি হচ্ছে জাতির সাথে সম্পূর্ণ প্রতারণা।

আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি তাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। একইসাথে তাদের কাছে আবারো প্রত্যাশা করছি, জাতির যে আশা-আকাক্সক্ষা সেই হারানো গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তারা কাজ করবেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে এক হাজার কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৫শ’র বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে, মিথ্যা মামলায় লাখ লাখ মানুষ আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই যে বিভাজনের রাজনীতি, ত্রাসের রাজনীতি; বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি ফ্যাসিবাদ জন্ম দিয়েছে।

সরকার ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারছে না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অধিকারের কথা বলা এখন অপরাধ। যারা এ ধরনের কথা বলে তাদের চিহ্নিত করা হয়, হুমকি দেয়া হয়, এমনকি গুম-খুন করে দেয়া হয়।

এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের কথা মতো কাজ না করলে গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হছে।

মরহুম চাষী নজরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি সত্য কথা বলতে ভয় পেতেন না।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকারের রক্ষায় কাজ করেছেন। তিনি এমন সময় চলে গেলেন যখন তাকে খুব দরকার ছিলো।

অধিকার রক্ষায় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন