বিলুপ্ত ছিটমহলে জমজমাট প্রচারণা

  25-10-2016 07:01AM


পিএনএস: নির্বাচনী হাওয়া বইছে লালমনিরহাট জেলার বিলুপ্ত ছিটমহল গুলোতে। ৬৮ বছর পর বিলুপ্ত ছিটমহলের আকাশে উড়ছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের অলিগলি। প্রার্থীরাও বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছে নানান প্রতিশ্রুতি। পাটগ্রামে ৬টি ইউনিয়নে সরকারদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মানছে না নির্বাচনী আচরণ বিধি ও আইন কানুন। সরকারি প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে থাকতে দিচ্ছে না সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের ঘরে ঘরে এখন বইছে ভোটের হাওয়া। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর নাগরিকত্ব পাওয়ার পর প্রথম নতুন ভোট প্রদান করবে তারা। ৩১শে অক্টোবর ভোটের দিনের প্রতীক্ষায় বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। এবারই প্রথম ভোট দিবে খুশি সবার মাঝে। ভোটকে কেন্দ্র করে ছিটমহলের আকাশে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার। পাড়ায় পাড়ার অলিগলি ছেঁয়ে গেছে পোস্টারে পোস্টারে। সবর্ত্র বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। নানান প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে প্রার্থীরা ছুটছে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। চাইছে ভোট করছে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়। ছিটমহলবাসীদের প্রথম ভোট হওয়ায় তারাও শুনছে প্রার্থীদের মন গলানো কথা। চায়ের দোকানে অলিতে গলিতে এখন চলছে নির্বাচনী আমেজ। চায়ের কাপেও উঠেছে নির্বাচনী ঝড়, চলছে একের পর এক বৈঠকের পর বৈঠক। ভোটারদের মাঝে চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিযোগিতা।

জেলার ৩টি উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এলাকায় বিলুপ্ত ছিটমহল হওয়ায় নানান জটিলতা কাটিয়ে ৩১শে অক্টোবর হবে নির্বাচন। ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ১টি ইউনিয়ন সীমানা আইনি জটিলতার কারণে ভোট স্থগিত হলেও বাকি ৮টি ইউনিয়নে হবে ভোট। বিলুপ্ত ছিটমহল ৮টি ইাউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন ২৮জন। এসব ইউনিয়নে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আসনে ৯৬ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট প্রদান করবে এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৩২জন ভোটার। সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে ১০০ অভিযোগ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঠে দিচ্ছে না প্রচার প্রচারণা চালাতে। বিএনপিদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দিচ্ছে প্রতিনিয়িত হুমকি। ধানের শীষ প্রার্থীর কর্মীরা প্রচার-প্রচারণার মাঠে গেলে দেয়া হচ্ছে মামলার হুমকি। শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সরকারি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসেম আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির আবদুল করিম প্রধানের ২০ অভিযোগ।

প্রচার-প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছেড়া, কর্মীদের হুমকি এমনকি বিএনপির প্রার্থীকে হত্যার হুমকি ও অভিযোগ নিার্বাচনী কর্মকর্তার কাছে দাখিল করলেও ওই প্রার্থী স্থানীয় এমপির ভগ্নীপতি হওয়ায় নীরব রয়েছে প্রশাসন। শ্রীরামপুর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী আবদুল করিম জানান, সরকারিদলীয় প্রার্থী ভোট ডাকাতির পাঁয়তারা করছে। শ্রীরাপুর ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ইউনিয়ন নির্বাচনে অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে অনেকের। ওদিকে জোংড়া ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থী আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করলেও নীরব প্রশাসন। স্বতন্ত্র প্রাথী শাহীন অভিযোগ দাখিল করেছে সোমবার লিখিত কিন্তু কোনো ফল হয়নি। জগৎবেড় ইউনিয়নেও সরকারদলীয় প্রার্থী বেপরোয়া।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রচার প্রচারণায় দিচ্ছে বাধা এমনকি ছিড়ে ফেলা হচ্ছে পোস্টার। কুচলিবাড়ী ইউনিয়ন এ বিএনপির প্রার্থীকে দেয়া হয়েছে হাত ভেঙ্গে। এলাকায় চালাতে পারছে না প্রচারণা। পাটগ্রাম উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এলাকা ছাড়া। বিএনপি প্রার্থী সুজা জানান, সরকারদলীয় লোকজন প্রচারণা করতে বারন করেছে। তারা হাত ভেঙ্গে দিয়েছে তার। এমনকি এলাকা ছাড়তে হুমকি দিচ্ছে। ওদিকে বুড়িমারী ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থী তাহাজুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিশাত। সরকার দলীয় প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। বুড়িমারী ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থী বেপরোয়া হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছে অভিযোগ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিশাদ। তবে ওদিকে সরকারদলীয় প্রার্থীরা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানান এসব অভিযোগ মিথ্যা।

নির্বাচনের আগে র্যা ব টহল দাবি প্রার্থীদের। জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. ফজলুল করিম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রার্থীদের সাবধান করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীও প্রস্তুত বলে জানালেন পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক। নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভোট কেন্দ্রে ভোটারের নিরাপত্তার দাবি বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন ভোটারদের।


পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন