সাঁওতালদের জমি ফেরতের প্রস্তাব ১৪ দলের নেতাদের

  05-12-2016 01:38AM



পিএনএস ডেস্ক : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের চিনিকলের জায়গা সাঁওতালদের ফেরত দেওয়ার জন্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে প্রস্তাব করেছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সম্পত্তি তারা ‘এনিমি প্রোপার্টি’হিসাবে সাঁওতালদের দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। জোটের শরিক দলের নেতাদের এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, এই জায়গা সাঁওতালদের দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। এটি চিনিকলের জায়গা, চাইলেই সরকার কাউকে দিয়ে দিতে পারে না।

রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় শরিক দলের নেতারা এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। গোবিন্দগঞ্জের চিনি কলের শ্রমিকদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা উঠে আসলে সাঁওতালদের জায়গাটি দিয়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সূত্র জানায়, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ওই সম্পত্তি সাঁওতালদের ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যে সমর্থন জানান শরিক দলের অন্য নেতারাও। জবাবে সরকার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ বলেন, এটি চিনিকলের সম্পত্তি। চাইলেই সরকার এ জমি কাউকে হস্তান্তর করতে পারে না। পরে বাদশা বলেন, চিনি কল যে শর্তে ‘লিজ’ নেয় জায়গাটি, এখন সেখানে আর তা হয় না। ফলে ‘এনিমি’ সম্পত্তি হিসাবে সাঁওতালদের দেওয়া যেতে পারে। জবাবে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এনিমি সম্পত্তি’হিসাবে দিতে গেলে বাংলাদেশের অনেক সরকারি জমিই অনেককে দিয়ে দিতে হয়। পরে উভয় পক্ষের আলোচনার পর উত্থাপিত বিষয়টি নিয়ে আর এগুয়নি।

গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে আখ কাটতে গেলে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল মারা যান, আহত হন অনেকে। পরে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাঁওতালদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়, যারা নিজেদের ওই জমির মালিকানার দাবিদার।

সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। সম্প্রতি চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলেরর চাষ শুরু হয়। ফলে প্রায় দুই বছর আগে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙালি হিন্দু-মুসলমান চিনিকলের বিরুদ্ধে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে তাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এর এক পর্যায়ে সাঁওতালরা খামারে বসতি গড়ে তোলে। একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করে তারা।

এরপর সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া ও কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহবায়ক ডা. অসিতবরণ রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটনাটি আলোচনায় নিয়ে আসেন। তারা নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার প্রস্তাব আনেন। জবাবে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এরসঙ্গে একমত পোষণ করে এর জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

ছোট দল বড় দল বিতর্ক
রবিবার জোটের বৈঠকে বড় দল, ছোট দল নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সূত্র জানায়, বড় দল ছোট দল সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ এমন বক্তব্য দিলে বৈঠকে উপস্থিত জোটের অন্য শরিক দলের নেতারা প্রতিবাদমুখর হন। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারসহ শরিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, আমরা ছোট দল। এভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের ‘মেনশন’করি বিষয়টি বিব্রতকর। আপনারাই যদি বলেন ছোট দল! তখন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা কোন দলই ছোট বা বড় দল নই। আমরা সবাই সমান-এই বলে বিতর্কের অবসান ঘটান। এরপর খালিদ মাহমুদ অনেকটা মজা করে বলেন, ছোট হলেও আর যেন ছোট না হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন