আওয়ামী লীগে ‘জামায়াতিকরণ’, আলোচনায় পলক

  08-12-2016 08:30AM


পিএনএস ডেস্ক: জামায়াতের পৌর আমিরের ছেলে নাটোরের সিংড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় দলটিতে জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ বিষয়ে নীরব থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের সমালোচনা চলছে। আর আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগকে মৌলবাদী করার চেষ্টা চলছে।

সিংড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি খালিদ হাসান জামায়াত নেতা রওশন আলীর ছেলে। সে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের ভাগ্নে। গত শনিবার খালিদ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পলকের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকে। এদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ছাত্রলীগের সাবেক একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের কমিটি হলে আওয়ামী লীগের নেতাদের পছন্দের অনেকেই কমিটিতে আসে। তাদের চাপে কখনো-কখনো দলের যোগ্য কর্মীদেরও বাদ দিতে হয়। কিন্তু যাদের সুযোগ দেওয়া হয় তারা সুদিনে বিভিন্ন সুবিধা নিতে সংগঠনকে বিতর্কিত করে। দুর্দিনে ছুরি মারে। অথচ যাদের বঞ্চিত করা হয় তারাই দুর্দিনে থাকে।

তিনি বলেন, জামায়াতের আমিরের ছেলে ছাত্রলীগের সভাপতি হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী একটি পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার সম্পর্কে বিস্মিত হয়েছি। একই সাথে ওই পরিবারের সদস্যকে ছাত্রলীগে প্রবেশ করানোর ঘটনায় অবাক হয়েছি। কেন্দ্রের বিষয়টি দেখা উচিত। কারণ এসব অনুপ্রবেশকারীরা দলের ক্ষতি করবে।

অবশ্য এর আগেও পলকের বোনজামাতা জামায়াত নেতা রওশন আরেফিনের সরকারি জমি থেকে গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি সেই ঘটনাটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, সারাদেশে জামায়াত নেতারা চাপের মধ্যে থাকলেও প্রতিমন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক থাকার কারণেই এই জামায়াত নেতা উল্টো ক্ষমতা প্রদর্শন করছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনে জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশের ঘটনায় সমালোচনা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের অন্দরমহলে জামায়াতের প্রবেশের ঘটনা পুরো জাতির জন্যই বিপজ্জনক।

এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মামলা থেকে বাঁচতে জামায়াত শিবিরের লোকজন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করছে। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য হুমকিস্বরূপ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে আরও বেশি মৌলবাদী করে তোলার চেষ্টা এটি। সে কারণেই স্থানীয় নেতাদের টাকা দিয়ে কিংবা আসন ভাগাভাগি করে জামায়াতি নেতারা প্রবেশ করছেন আওয়ামী লীগে। এটি একটি অশনিসংকেত।

তিনি বলেন, যতই শেখ হাসিনা বলুন না কেন আওয়ামী লীগ ছোট দল না যে তাদের অন্য দলের কর্মী লাগবে। কিন্তু এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, তারা (জামায়াত-শিবির) ঢুকছে। এটি উদ্বেগজনক। দলটির হাইকমান্ডকে তা ভাবতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, হানিফ সাহেব নিজে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগকে জামায়াতিকরণ করেছেন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশে পাকিস্তানিকরণ হবে। সেজন্য তো মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ তো হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্যে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড কঠোর না হলে কেবল আওয়ামী লীগ না, গোটা বাংলাদেশই ধ্বংসের দিকে এগুবে। এটি জাতির জন্য বড় বিপর্যয় নিয়ে আসবে।

এ ধরনের অনুপ্রবেশে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জে যেসব হচ্ছে, এসবের পিছনে ওই অনুপ্রবেশকারীরা জড়িত। দলের যেসব কোন্দল হচ্ছে তার পিছনে শিবিরের অনুপ্রবেশকারীরা জড়িত। তারা জেনুইন ছাত্রলীগের উপর আক্রমণ করছে। এটি একটি যুদ্ধের কৌশল, যখন কেউ বাইরে থেকে যুদ্ধ করে দুর্গ দখল করতে না পারে তখন ভিতরে প্রবেশ করে। জামায়াত-শিবির পেট্রোল বোমা মেরে, মানুষ পুড়িয়ে সরকার পতনে ব্যর্থ হয়ে এখন আওয়ামী লীগের ভিতরে প্রবেশ করে দুর্গ দখল করতে চাচ্ছে।

জামায়াত নেতার ছেলে ছাত্রলীগের স্থানীয় পর্যায়ে সভাপতি হওয়ার বিষয়ে শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের বলছেন আগাছা দূর করবেন। কিন্তু এরাই (জামায়াত-শিবির) তো আগাছা, এদের তো দূর করতে পারছে না, এরা আরও বাড়ছে। এটি আওয়ামী লীগ ও দেশের জন্য বিপদজ্জনক, অশনিসংকেত। সূত্র: পরিবর্তন

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন