সমঝোতার আশায় বিএনপি

  15-01-2017 08:48AM


পিএনএস: নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতাকেই বেশি প্রয়োজনীয় মনে করছে বিএনপি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনের চেয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার ভেতরেই তারা দেখছেন সমাধানের আলোকবিন্দু। বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যরা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারের আমলেই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন হয়নি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ আইন করলেও পরে আওয়ামী লীগই সে আইন বাতিল করেছে। এখন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করলেও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া সরকার কোনো আইন প্রণয়ন করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে সংটের কাঙ্ক্ষিত সমাধানও আসবে না। তবে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপের উদ্যোগের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। তারা বলছেন, সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবই বিএনপির প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখন সবার সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসা মতামতের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট একটি কার্যকর উদ্যোগ নিলে এবং সরকার আন্তরিক হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধান আসবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে যে সমাধান আসবে তাই সরকার আইনে পরিণত করতে পারে। তবে প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ ও দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সরকারের আন্তরিকতার ওপর।

এ ব্যাপারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য আমরা প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। তিনি সে প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন। সংলাপের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত মতামত গ্রহণযোগ্য ও আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি- প্রায় সব রাজনৈতিক দলই স্বাধীন-শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এখন সরকারের আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করছে এ উদ্যোগের সাফল্য-ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য নিয়ে যদি সরকার আন্তরিক হয় তবে এখানে আশাবাদ সকলের। কেবল বিএনপি নয়, দেশের মানুষ এ উদ্যোগের ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু সরকার যদি আন্তরিক না হয় এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য সকল কলাকৌশলে অনড় থাকে তবে কোনো ফলাফল বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, আইন করতে হবে। কিন্তু আইনটা কেমন হবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে যদি নির্বাচনকালীন সরকার ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি সমঝোতায় পৌঁছা যায় তবে সে আলোকে আইন করতে পারে। যে কমিশন ও সরকারের প্রতি সবার আস্থা থাকবে, যার অধীনে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, সে ঐকমত্য ও সমঝোতা হলে এ সরকারই সেটা আইনে রূপ দিতে পারে। অন্যথায় যত আইনই হোক সংকটের সমাধান তো আসবে না। ড. মোশাররফ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত করতে পারেনি। আইন ছাড়াই তো একটি প্রশাসনিক নির্দেশের মাধ্যমে নির্বাচনগুলো হয়েছে। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন হলেও আওয়ামী লীগ সেটা বাতিল করেছে। আপত্তিটা এখানেই যে, প্রশাসনিক নির্দেশের মাধ্যমে নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশনের লোকবল ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রশাসনই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর প্রশাসন দলীয় সরকারের নির্দেশ পালনে বাধ্য। যারা আইন প্রণয়নের কথা বলছেন তাদের বুঝতে হবে- আইনের জন্য নির্বাচন ঠেকে থাকে না। নিরপেক্ষ সরকার না থাকলেই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন প্রয়োজন। কিন্তু আইনের আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া, ক্ষমতা ও নির্বাচন পরিচালনা এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে কোনো আইনই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস একমাত্র রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমেই গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সংলাপে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিস্তারিত প্রস্তাবে কি দিয়েছেন সব জানতে পারিনি। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রস্তাব এবং মতামত দেখে প্রতীয়মান হয়েছে আমাদের প্রস্তাবনার সঙ্গে বেশির ভাগ দলের প্রস্তাবনার বড় ধরনের সামঞ্জস্য আছে। প্রেসিডেন্টের চলমান সংলাপ উদ্যোগের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, পুরো বিষয়টিতে আমি এবং আমরা এখনও আশাবাদী। কোনো নেতিবাচক চিন্তা আমরা করছি না। আমরা আশা করি তিনি সবার সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসার প্রস্তাব ও মতামতের ভিত্তিতে একটি কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তার প্রস্তাবনায় স্থায়ী একটি ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্ছনীয় বলেছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেখানে আইন প্রণয়নের সময় আছে কিনা সেটাই তো একটি প্রশ্ন। এখন সরকার যদি আইন প্রণয়নের দোহাই দিয়ে আগামী কমিশন আইনের ভিত্তিতে গঠন হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তবে তা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার দ্রুতগতিতে নিজেদের সুবিধামতো নিজেরা একটি আইন করে নিলে সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে না। সবার মতামত ও সমঝোতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। সমঝোতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করা হলে সেটা নতুন কমিশন গঠনের পরও হতে পারে।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মতামতে এখনই উপযুক্ত আইন বা অধ্যাদেশ জারি করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি, জাসদ, গণফোরাম, ন্যাপ, এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, বিএনএফ, তরিকত ফেডারেশন, বিজেপি, বাসদ, বিকল্পধারা, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল। অন্যদিকে কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপি এখন সংসদে নেই। বিএনপিবিহীন সংসদে নিজেদের ইচ্ছা ও সুবিধামতো তৈরি ও আইন পাস করতে আইন প্রণয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তারা জানান, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান আসবে সেটা যেমন সত্য তেমনি ভবিষ্যতে যাতে নতুন করে এ সমস্যা ফিরে না আসে তাই আইন প্রণয়নও জরুরি। আর রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করা হলে সে আইন অধিক কার্যকর ও সুফল বয়ে আনবে। কারণ সে আইন মানার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক বাধ্যবাধকতাও থাকবে বেশি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন