বিতর্কিত নেতাদের তালিকা করছে আওয়ামী লীগ

  23-02-2017 09:23AM


পিএনএস: দলের নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, অত্যাচারী, চাঁদাবাজ, ভূমি দখলকারী এবং নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণকারী নেতাদের তালিকা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। এদের দল থেকে বহিষ্কার করা না হলেও ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি যে কোনো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হবে। তবে এর কোনো বিরূপ প্রভাব যাতে সংগঠনের ওপর না পড়ে, এজন্য এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে এগিয়ে নেয়া হবে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ তালিকা করছেন এবং বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, দলের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অনেককে নাম মাত্র বহিষ্কার করা হয়, বহিষ্কারের পরও দলের অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন তারা। যেসব নেতার অপকর্ম গণমাধ্যমে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয় সেসব ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া বাদবাকি বিষয়ে পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে এবং দল ও এলাকায় নেতাদের অবস্থান, অতীত অবদানের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলেও দলের রাজনীতিতে এসব বিতর্কিত ও বিশৃঙ্খল নেতাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সারাদেশে সংসদ সদস্যসহ নেতাদের নামে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অত্যাচার-নির্যাতন, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাই একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে তুলেছেন। একদিকে এসব অভিযোগের যেমন তদন্ত, যাচাই-বাছাই করা সময়সাপেক্ষ, আরেক দিকে এত অভিযোগের ব্যবস্থা নিতে গেলে দলে নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, কোন্দল বাড়বে ও দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
তিনি জানান, যেসব এলাকায় বিকল্প নেতৃত্ব নেই, সেসব এলাকায় বিতর্কিত ও বিশৃঙ্খলদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাখতে হয়। এ ছাড়া অঞ্চল ভেদে সংগঠন পরিচালনার কৌশল ভিন্ন হয়, যার ফলে অনেকে বিশৃঙ্খলা করেও পার পেয়ে যায়। কারণ সংগঠন দুর্বল হলে এর সুবিধা নেবে বিরোধী দল, যা দলের জন্য ক্ষতিকর হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান নওফেল বলেন, যেসব নেতার নামে বিভিন্ন অপকর্ম, বিতর্কিত কর্ম ও দলীয় শৃঙ্খলা না মানার অভিযোগ রয়েছে তাদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সংশোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সিদ্ধান্ত মানার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার বলছেন কিন্তু এরপরও যারা ঠিক হচ্ছেন না, দলের রাজনীতিতে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না বলে মনে করেন তিনি।

সংসদ সদস্যদের বিষয়ে যে অভিযোগ থাকে তার ব্যাপারে সরাসরি ওবায়দুল কাদের কথা বলেন আর অন্য সবার বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকরাই দেখভাল করেন বলে জানান মহিবুল হাসান নওফেল। সূত্র জানায়, গত এক মাসে অন্তত পনেরজন সংসদ সদস্যকে দলীয় কার্যালয়ে ডেকে সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহীতে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যে নেতারা বসন্তের কোকিল নিয়ে দল ভারী করেছেন, তারা এগুলোকে সরান। আওয়ামী লীগে কোনো গডফাদার দরকার নেই। জনপ্রিয় নেতার দরকার আছে। অপকর্ম করলে দলে ভালো লোকরা আসেন না। খারাপ লোকরা আসে। দলে খারাপ লোকের দরকার নেই। তিনি আরও বলেন, ১০টা ভালো উন্নয়নকে দুটা খারাপ আচরণ ঢেকে দিতে পারে। মানুষ খারাপ ব্যবহার কোনো দিন ভোলে না। এখন ক্ষমতায় আছেন। কেউ কিছু বলে না। যখন নির্বাচন হবে ব্যালটের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে দেবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় নেতার অত্যাচার-নির্যাতন, চাঁদাবাজি, জমি দখল, এমপি বনাম জেলা আওয়ামী লীগের নেতার বিরোধ ও অসাংগঠনিক কর্মকা- তুলে ধরে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে অসংখ্য অভিযোগ আসছে। ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিসে অথবা কেউ কেউ সরাসরিও অভিযোগ দপ্তরে জমা দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব অভিযোগ পাঠান।

দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অভিযোগগুলোর গুরুত্ব দেখে স্ব-স্ব বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে পাঠান। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ থাকলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযুক্ত নেতাদের ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে এনে সমাধানের চেষ্টা করেন। দপ্তর সূত্র জানায়, অভিযোগগুলো পাঠানো হয় দলীয় সভাপতির বরাবরে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলছে। কোনো কোনো অভিযোগের সত্যতা মিলছে না। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলো সাংগঠনিক সম্পাদকদের হাতে দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে ডেকে হুশিয়ার করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

এ প্রসঙ্গে দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সংক্ষুব্ধ নেতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে দলের আন্তঃকোন্দল, অসাংগঠনিক কর্মকা- বিষয়ে অভিযোগ লিখে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানানো হয়। গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে সাধারণ সম্পাদক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নিজে কথা বলেন ও অভিযোগের তদন্ত করেন। অভিযোগগুলো সংরক্ষণ করা হয় বলে জানান তিনি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন