বরিশালে আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বেকায়দায়

  27-05-2017 07:28PM

পিএনএস, (মো:আরিফ হোসেন) বরিশাল : ছিলেন তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৬ সালে আওয়ামীলীগে যোগদানের পর রাতারাতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ পেয়ে তিনি এখন হয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। গত ২৩ মে তিনি নিজ দলের সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে বিষোধাগার করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপিকে ইস্যু তৈরি করে দিয়েছেন। ফলে চরম বেকাদায় পরেছেন আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।

ঘটনাটি জেলার একমাত্র দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জের। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে ইতোমধ্যে বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইদুল ইসলামের সকল পদ থেকে অপসারনের দাবিতে তার নিজ এলাকায় আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় মইদুল ইসলামকে তার নিজ এলাকা মেহেন্দীগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে মইদুল ইসলামের দেয়া আপত্তিকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে গত ২৫ মে মেহেন্দীগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। অপরদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর পরই বরিশাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ফের সাংসদ পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ তুলে ধরেন মইদুল ইসলাম।

সদ্যসমাপ্ত মেহেন্দীগঞ্জের চাঁনপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরধরে সাবেক ও বর্তমান সাংসদের চরম বিরোধে নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।যার প্রভাব পরবে আগামি সংসদ নির্বাচনে। অপরদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইদুল ইসলামের দেয়া বক্তব্যে “২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২ জানুয়ারি শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল বোমা মেরে ১১জনকে হত্যার সাথে পঙ্কজ নাথ জড়িত। তার নির্দেশে বোমা মেরে ১১জনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।এ কারণে সে দলের মনোনয়ন পেয়ে ভোটার বিহীন নির্বাচনে এমপি হয়েছে”এ বক্তব্যের রেশ ধরে গত ২৬ মে বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামীলীগের থলের বেড়াল বেরুতে শুরু করেছে। মইদুলের দেয়া বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এখন বিএনপির ইস্যু হওয়ায় চরম বেকাদায় পরেছেন আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।

এ কারণে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইদুল ইসলামের সকল পদ থেকে অপসারনের দাবিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করা হয়। শেষে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় মইদুল ইসলামের মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, মইদুল জামায়াত ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কারণেই দলের নির্বাচন নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে মইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন আমার ভোট আমি দিতে পারিনি, তা অনেক আগেই বাক্স ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওইসময় মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিলো।

প্রতিবাদ সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলুর সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান রহমান বিনতে সফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি সুভাষ চন্দ্র সরকার, শহিদ শাহ্, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, দপ্তর সম্পাদক রাকিব মাহামুদ তালুকদার, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন দেবনাথ, ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল আলম লিটন, মিজানুর রহমান নেহাল, প্রফেসর মনিরুজ্জামান মনির, মকিত তালুকদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম-আহবায়ক সোহেল মোল্লা, সুমন ফরাজী, হাবিবুর রহমান খোকন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, মইদুল ইসলাম সদ্যসমাপ্ত চাঁনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৫ লাখ টাকায় মনোনয়ন বাজিণ্যসহ সম্প্রতি সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার জন্য বির্তকিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। ফলে দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বক্তারা আরও বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে চারদলীয় ঐক্যজোটে যোগদান করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় মইদুল ইসলামের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। ২০০৬ সালে মইদুল ইসলাম আওয়ামীলীগে যোগদান করে নির্যাতিত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ওপর একের পর এক জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন করায় গত ২১মে রাতে সে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পরেছেন। এরপর থেকেই সে সংবাদ সম্মেলন ও প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমপি পংকজ নাথসহ পুরো দলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে আসছেন।

এরকম বক্তব্য দিয়ে দলীয় ভাবমূর্তি ও শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা হাইব্রিড নেতা মইদুল ইসলামকে দল থেকে বহিঃস্কারের দাবি করেন।সদ্যসমাপ্ত চাঁনপুর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পরাজয়ের বিষয়ে পঙ্কজ নাথ এমপি বলেন, আমি আওয়ামীলীগের লোক। আমার পরিবারের কেউই আওয়ামীলীগের বাইরে নেই, তারা অন্যকোন দলও করেন না। যারা নেপথ্যে বিএনপি ও জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে সেইসব ভূঁইফোড় আওয়ামীলীগ নেতারা ভালো পদ-পদবী পাওয়ার পর তৃণমূল আওয়ামীলীগকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তারা আমাদের নেতা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ভুল বুঝিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করে দলকে পরাজয় উপহার দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে বিএনপি নেতা ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে, তাকে দলে অনুপ্রবেশ করিয়ে ৪৫ লাখ টাকার মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে তাকেই মনোনয়ন দেয়ায় তৃণমূল কর্মীরা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে পঙ্কজ নাথ বলেন, যেসব বিএনপি নেতা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো সেইসব নেতাদের কোন কোন ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদক বানিয়ে দলকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।


চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে পঙ্কজ নাথ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটি ঘটনারও কোন প্রমান দিতে পারলে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিচার করবেন আমি সব মাথা পেতে নেব। মনোনয়ন বাজিণ্যসহ অন্যসব অভিযোগ অস্বীকার করে মইদুল ইসলাম বলেন, পঙ্কজ নাথের থলের বেড়াল বের হতে শুরু হওয়ায় সে ও তার লোকজনে আমার বিরুদ্ধে মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের বক্তব্যের সাথে বাস্তবের কোন মিলনেই।


পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন