তসলিমার স্ট্যাটাস নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল!

  11-10-2019 06:05PM

পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছে সারাদেশে। দেশের সব মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ছাত্র সমাজ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সও এরইমধ্যে বার্তা প্রকাশ করে এই বর্বরোচিত হত্যার বিচার দাবি করেছে। এরইমধ্যে আবরারকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের দেয়া এক স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যেখানে তিনি আবরারকে সরাসরি শিবিরকর্মী না বললেও আবরারের চালচলনকে শিবিরঘেঁষা বলে দাবি করেছেন। তসলিমার এই স্ট্যাটাসে বেজায় চটেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট ড. আসিফ নজরুল। তিনিও ফেসবুকে পাল্টা স্ট্যাটাসে তসলিমাকে ‘বিকারগ্রস্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।

পাঠকের জন্য দুজনের স্ট্যাটাসটিই হুবহু তুলে ধরা হলো-

তসলিমা নাসরিন:
‘আরবাব ফাহাদের গুণের বর্ণনা করতে গিয়ে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া পড়শি, চেনা পরিচিত সবাই বলছেন আরবাব মেধাবী ছিল এবং আরবাব ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। মেধাবী হওয়াটা নিশ্চয়ই গুণ কিন্তু ২১ বছর বয়সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটা তো গুণ নয়, বরং দোষ। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি , বিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই! সাত আকাশের ওপর এক সর্বশক্তিমান বসে আছে, সে ছ'দিনে আসমান জমিন বানিয়েছে, আদম হাওয়াকেও মাটি দিয়ে বানিয়েছে, কথা শোনেনি বলে জমিনে ফেলে দিয়েছে, কেউ একজন ডানাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে তাকে এবং তার বানানো স্বর্গ নরক দেখে এসেছে -- এসব আজগুবি অবিজ্ঞান আর হাস্যকর গাল গপ্প কোনও বুদ্ধিমান কেউ বিশ্বাস করতে পারে? আরবাব পড়তো হয়তো বিজ্ঞানের বই, পরীক্ষা পাশের জন্য পড়তো। তার বিজ্ঞান মনস্কতা ছিল না। নিজস্ব চিন্তার শক্তি ছিল না। একে আমি পড়ুয়া বলতে পারি, মেধাবী বলবো না। আরবাব ছিল নিব্রাস ইসলামদের মতো। একবিংশ শতাব্দির আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, কিন্তু মাথায় চোদ্দশ বছর আগের অবিজ্ঞান আর অনাধুনিকতা।

আরবাব অফিসিয়ালি শিবির না করলেও শিবিরের মতো চাল চলন আর চিন্তা ভাবনা বানিয়েছিল । তাতে কী! শিবিরদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাকে যারা পিটিয়েছিল, আমার বিশ্বাস, মেরে ফেলার উদ্দেশে পেটায়নি। কিন্তু মাথায় আঘাত লেগেছে, মরে গেছে। যারা পিটিয়েছিল, তাদের শাস্তি অবশ্যই হতে হবে। এর মধ্যেই কয়েকটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

আসিফ নজরুল:
‘তসলিমা নাসরিনের শিবলিঙ্গ পুজোয় সমস্যা নাই, সমস্যা আছে আবরারের নামাজ পড়া নিয়ে। এই বিকারগ্রস্ত মহিলাকে নিয়ে কখনো লিখিনি আমি। কিন্তু তার এ কথার উল্লেখ প্রয়োজন হলো এটা বলতে যে বাংলাদেশের বহু ছদ্মবেশী সেক্যুলারের আসল চেহারা তসলিমার মতো।

কেউ আল্লাহ লিখলে তাদের সমস্যা হয়, ভগবান বা ঈশ্বর লিখলে ঠিক আছে। আরো কতো কিছু! অথচ সেক্যুলার (অসাম্প্রদায়িকতা অর্থে) মানে হচ্ছে সব ধর্ম সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল থাকা অথবা কোন ধর্ম সম্পর্কেই বিরূপ মন্তব্য না করা।

যারা একচোখা হয়ে শুধু একটা ধর্মে সমস্যা খোজে তারা সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক ও মানবতার শত্রু।’

উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রবিবার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন