খুচরা বাজারে চিনির সংকট

  23-05-2017 06:07AM


পিএনএস ডেস্ক: পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার বেশ আগে থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে চিনির বাজার। সমন্বয়হীনতার কারণে একেক ক্রেতার কাছে একেকরকম দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্ধিত দামে চিনি বিক্রির পরও খুচরা বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, তাঁরা ডিও কেটে বসে আছেন। কিন্তু চিনি পাচ্ছেন না। যে পরিমাণ ডিও কাটা হচ্ছে তার সামান্য পরিমাণ চিনি মিলছে। এভাবে একটা সংকট তৈরি করা হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খোলা চিনি কোথাও আছে কোথাও নেই। যাদের কাছে আছে তারাও আবার বিক্রি করছে রয়ে-সয়ে। কলাবাগানের নিত্যপণ্যের খুচরা দোকানি কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘চিনি আমরা যে পরিমাণ চাই, তা পাই না। আর যেটুকু দিচ্ছে তা খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু রমজান চলে আসছে, আর চাহিদাও বেড়ে গেছে। বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের বসে থাকতে হচ্ছে চিনির জন্য। ’

একই ধরনের অভিযোগ কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতাদের। তাঁরা বলেন, ‘ডিও কেটে আমরা অনেক দিন ধরেই বসে আছি। কিন্তু মাল পাচ্ছি না। মাসখানেক সময় লাগছে। আবার যখন চিনি আনতে ট্রাক যাচ্ছে সেটাও বের হয়ে আসতে তিন-চার দিন সময় লাগছে। ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

খুচরা বাজারের তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন কম্পানির চিনি বাজারে বিভিন্ন রকমে বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। বাংলাদেশ সুগার মিলস কর্পোরেশনের চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। তবে খুচরা যেসব দোকানি বিক্রি করছেন তাঁরা ৭০ টাকার কমে দিচ্ছেন না। সিটি, মেঘনাসহ বিভিন্ন কম্পানির প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। সুপারশপগুলো এ চিনি বিক্রি করছে ৭২-৭৩ টাকায়। তবে আগোরা প্রতি প্যাকেটে আবার অতিরিক্ত ৪ শতাংশ করে কর নিয়ে থাকে। এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো এবং সারা দেশে ট্রাকসেলের মাধ্যমে ৫৫ টাকায় চিনি বিক্রি করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিনির বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কোনো মনিটরিং না থাকায় এমনটা হচ্ছে। যে যার ইচ্ছেমতো করে চিনি বিক্রি করে যাচ্ছে।

মৌলভীবাজারের আনোয়ার অ্যান্ড ব্রাদার্সের পাইকারি বিক্রেতা আনোয়ার হাবিব বলেন, ‘মিল ঠিকমতো চিনি সাপ্লাই দিতে পারছে না বলে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। কারণ এখন তো চাহিদা বেড়ে গেছে। গতকাল ৩২০০ টাকা বস্তা বা ৬৪ টাকা কেজিতে চিনি পাইকারি বিক্রি হয়েছে। ’ এই বিক্রেতা আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘বাজারে তো কোনো সমন্বয় নেই। একেকজন একেক রকমে বিক্রি করছে। আমরা মিল থেকে ৬০ টাকায় কিনে ৬৪ টাকায় বিক্রি করছি। ’

তবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এই চিনি বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২১৮০-২২৬০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা প্রায়। যেখানে ঢাকার পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৪ টাকা। তবে মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মাঝে আমাদের মিল বন্ধ ছিল ঠিকই। এখন চালু হয়েছে এবং আমরা আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী চিনি সাপ্লাই দিচ্ছি। ’

এ ব্যাপারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘এগুলো আর কিছুই নয়। সরকার কখনো বাজার মনিটরিং করে না। সামান্য যা করে সেটাও আইওয়াশ। মনিটরিংই যখন করছে তখন তারা সমন্বয়ের জন্য কিভাবে কাজ করবে? মনিটরিং সংস্থাগুলোর কারণেই আজ অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি ফায়দা তুলে নিচ্ছে। ’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন