উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশিদের পছন্দ মালয়েশিয়া

  22-10-2016 10:10AM



পিএনএস ডেস্ক: লেখাপড়ার পাশাপাশি রয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এ ছাড়া পড়াশোনার খরচ ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে অনেক কম। এসব কারণেই বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া প্রথম পছন্দ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদন এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের মালয়েশিয়া শিক্ষা মেলা-২০১৬। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ডেইলি স্টার সেন্টারে সরেজমিন দেখা যায়, মেলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপচেপড়া ভিড়।

মেলায় অংশ নেওয়া কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেখাপড়া করতে মালয়েশিয়ায় যেতে ন্যূনতম এসএসসি বা ‘ও’ লেভেল অথবা দাখিল পাস হতে হবে। তা হলেই পাওয়া যাবে স্টুডেন্ট ভিসা। এসএসসি ও সমমানের শিক্ষা ডিপ্লোমা লেভেল, এইচএসসি ও সমমান হলে ডিপ্লোমা এবং ব্যাচেলর সব ধরনের প্রোগ্রামেই যাওয়ার সুযোগ আছে দেশটিতে। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতে স্টাডি গ্যাপ গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ব্যাচেলর পাস করেও ডিপ্লোমা অথবা পুনরায় ব্যাচেলরে ভর্তি হওয়া যায়। বাধ্যকতা নেই আইইএলটিএস স্কোরের। অবশ্য অল্প কয়েকটি বিষয়ের জন্য আইইএলটিএস প্রযোজ্য।

মেলায় কথা হয় এক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি তার সন্তানকে মালয়েশিয়ায় পড়াতে চান। সেজন্য উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজে এসেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্লেনে সাড়ে তিন ঘণ্টায় মালয়েশিয়া পৌঁছা যায়। প্লেনের টিকিটের দামও কম। যেহেতু মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা, তাই ইচ্ছা হলেই খুব সহজে বাংলাদেশে আসা যায়। এ ছাড়া লেখাপড়ার মানও উন্নত। এদিকে এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশনের কর্মকর্তারা জানান, সেখানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষার্থে কাঙ্ক্ষিত দেশ হওয়ার যৌক্তিক কারণ ব্যখ্যা করেন শিক্ষাবিদ অধ্যপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশি শিার্থীরা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় যেত, কারণ সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জনের বড় একটি সুযোগ ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এখন সে সুযোগ খুবই সীমিত। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের তুলনায় মালয়েশিয়ায় শিক্ষা ব্যয় অনেক কম। তবে জেনেশুনে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেন এ শিক্ষাবিদ।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করা শিক্ষার্থী তৈমুর বলেন, দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ার খরচ প্রায় সমান। এ ছাড়া ওই দেশে পড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করার সুযোগ আছে। অন্যদিকে লেখাপড়ার পর চাকরি পাওয়ার একটা লিঙ্কআপও হয়ে যায়।

ঢাকার একটি স্বনামধন্য কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী মোস্তাকিম, তানিয়া, সজলেরও ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দ। সজল জানান, তার আত্মীয়দের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মেলায় অংশ নিয়েছেন। সব জেনেশুনে তিনি সেখানেই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মোস্তাকিমও চান মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে।

মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল রহিম খান মুকুল গণমাধ্যমকে জানান, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অবশ্যই সচেতনতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতে হবে। তথ্য-উপাত্ত জেনে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে কম খরচের কারণে বাংলাদেশিদের জন্য উচ্চশিক্ষার পছন্দের দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া। এখানে রয়েছে লেখাপড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ।

ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশি শিার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শীর্ষ পছন্দ মালয়েশিয়া। ‘গ্লোবাল ফো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে মোট ২৪ হাজার ১১ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমান। এর মধ্যে ৫ হাজার ২৭১ জন যান মালয়েশিয়ায়। যুক্তরাজ্যে যান ৪ হাজার ৮৬৮ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৪ হাজার ৫৬৫ জন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় ৩ হাজার ৯১৫, কানাডায় ১ হাজার ৬১৪, জাপানে ১ হাজার ৫৪, জার্মানিতে ৯৯৩, ভারতে ৭৭৪ ও সৌদি আরবে ৭৩২ জন পড়তে যান। ফিনল্যান্ডে যান ৫৩৫ জন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন