যোগ্য শিক্ষার অভাবে পঞ্চবাহিনীর দোসররা পার পেয়ে যাচ্ছে

  25-03-2017 06:01PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আগের মতো হচ্ছে না। নব্বইয়ের পর আজও হয়নি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘদিন এই নির্বাচন না হওয়ায় জাতি যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। মানবতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্রহীনতাসহ বিশ্বব্যাপী চলমান নানা সংকট-সমস্যায় গর্জে ওঠে যে চত্বর, সেটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আজকে যেখানে যৌক্তিক আন্দোলনের ছিঁটেফোঁটাও চোখে পড়ে না।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-উত্তর ও পরবর্তীকালে যেখানে প্রতিবাদের যৌক্তিক মশাল জ্বলত, আজ দিনদুপুরে সেখানে পড়ছে লাশ! মানবতার দাবিতে উত্তাল তরঙ্গ না থাকায় সেখানে নানা ধরনের অপরাধকর্ম সংঘটিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্ব তো দূরের কথা, দেশ ও জাতির সমস্যা-সংকটেও এখানে এখন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অতীত ভূমিকা লক্ষ করা যায় না। যৌক্তিক দাবিতে ছাত্র-যুবদের বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করা তো দূরের কখা; বরং পারলে একটি সুবিধাবাদী মহল তা প্রতিহত করার মওকা আঁটে।

জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজকে যা হয় আর হচ্ছে, তাতে শিক্ষাসচেতনরা ব্যথিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় পণ্ডিতজনরা ভবিষ্যৎ মেধাবী নেতৃত্ব নিয়ে হতাশ। তারা বেশি হতাশ ছাত্রদের আসল কাজ শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে অর্থের পেছনে ছোটা নিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণীর ছাত্রনেতা শুধু মাদক সেবন ও গ্রহণই করে না, তারা এই ব্যবসাও করে। করে নাকি আদিম ব্যবসাও। যাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মাদক নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এখন নাকি মাদক বিক্রির অভয়ারণ্য, ভাবা যায়।

দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে বরাবরই। সেখানে টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সিটবাণিজ্য, ফাও খাওয়া, দখলদারিত্বের অবসান হয়নি আজও। ছাত্র সংগঠনগুলোর সহ-অবস্থান মোটেও নেই। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ মতোই একমুখী অবস্থা বিরাজমান।

দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চরদখলের অবস্থা। এর অবসানে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি। এতে ভারসাম্যের পাশাপাশি যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি হবে। আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে ভবিষ্যতে দেশে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র সংসদ থাকলে তারা শিক্ষার উন্নয়নে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অবদান রাখতে পারবে দেশের ভেতরে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনাসহ সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডে।

বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অতীতের ছাত্র আণ্দোলনের গৌরবময় গতিটুকু না থাকায় আজকে গর্জে উঠছে না ঢাবি ক্যাম্পাস। জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে অর্থ, মাদক ও সামাজিক অস্থিরতা তাদের পেয়ে বসেছে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। এমনটা একটি জাতিকে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারী কৌশল।

তারুণ্যকে কৌশলে এভাবেই সর্বনাশা পথে ধাবিত করছে মহলবিশেষ। যে মহল এ দেশ ও জাতির অগ্রগতি চায় না। সগৌরবে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়ালে যাদের মাথাব্যথার কারণ, তারাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্য নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখার সর্বনাশা আয়োজনে ব্যস্ত। সঠিক কাজ সঠিক সময়ে না করার ব্যাপারে যত সমস্যার আকর তারাই।

তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন সময়ের দাবি। দেশ-জাতি গঠনে ও শত্রু-মিত্র চেনার সুযোগ যে শিক্ষা দেবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সে শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা অতীব জরুরি। অন্যথায় পঞ্চবাহিনীর দোসররা বিডিআরে দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মতো জাতিবিনাশী আরো বড় বড় ক্ষতিকর কাজ করে সহজেই পার পেয়ে যাবে।

ছাত্র সংদদ নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতি আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বশেষ সর্বোচ্চ আদালত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এখনো যদি দায়িত্বশীলদের টনক না নড়ে, তাহলে দেশে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও মেধাবী নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টিতে সময়োপযোগী আধুনিক শিক্ষা প্রয়োজন। সে প্রয়োজন অনেকটা মিটাতে পারে ছাত্র সংদদ নির্বাচন।



লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন