ফ্যাশনে ‘কালারফুল’ চুল

  30-11-2016 12:58PM

পিএনএস ডেস্ক: কথায় আছে ‘কুড়িতে বুড়ি’। আজকাল এ কথার কোন ভিত্তি নেই। এখন চুল সাদা হওয়ার আর বয়স লাগে না। অনেকের বয়স হওয়ার আগেই চুল সাদা হয়। অনেকেই আবার ইচ্ছে করেই চুলে সাদা করে ফেলেন। আজকাল চুল শুধু সাদা নয়, গ্রে, ব্রাউন, পিঙ্কসহ আরও নানা কালার করতে দেখা যায়। আগে কম-বেশি সবাই বয়সটাকে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করতেন। এক্ষেত্রে তারা কলপের সাহায্য নিতেন। এখন সময় বদলেছে। সেই সঙ্গে বদলেছে মানুষের মন মানসিকতাও। এখন মানুষ কালো নয়, বরং সাদাসহ অন্য কালারের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। বর্তমানে সময়ে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘কালারফুল’ চুল। বাংলাদেশের অভিনেত্রী থেকে শুরু করে ফ্যাশন সচেতনরাও কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।

এখন বিশ্বের সর্বত্র স্টাইলের হাওয়া বইছে। সেই হাওয়াতে গা ভাসিয়েছেন বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। তিনি এই মৌসুমে নিজের চুল সাদা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তার দেখাদেখি আরেক বিশ্বসেরা স্টাইকার নেইমারও সাদা করেছে তার চুল। ফ্যাশনের হাওয়ায় শুধু খেলোয়াড়রা নয়, জনপ্রিয় গায়ক ও পপ তারকা জাস্টিন বিবার সাদা চুলে হাজির হয়েছেন। এখন এই স্টাইলও ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এক্ষেত্রে কিন্তু পিছিয়ে নেই বলিউড, হলিউড তারকাসহ ফ্যাশন সচেতনরা।

এক সময় জাপানে এই স্টাইল আর ফ্যাশনের বেশ চলন ছিল এবং এখনও আছে। হয়তো নেইমার, জাস্টিন বিবার আর মেসি সেখান থেকেই এই স্টাইল রপ্ত করেছেন।

তবে আজকাল ফ্যাশন সচেতনরা চুল কালার করেন মূলত ৬ কারণে-

সিলভারের বিশেষত্ব
চুলের গ্রে কালারটির আলাদা একটি বিশেষত্ব আছে। এই কালার শুধু বয়স ঢাকতে নয়, বরং ফ্যাশনেও সহজেই সবাইকে মানিয়ে যায়। অনেকেই আবার মনে করেন, সিলভার কালারটি মূল্যবান হওয়া এর বিশেষত্বের আরেকটা কারণ।

সাদা বেশি ভালো
চুলে যে কোন কালার করা হোক না কেন তা একটা নির্দিষ্ট সময় পর নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য চুল সাদা করাই ভালো। প্রতি ছয় সপ্তাহে অন্তত একবার করে চুল বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হলে বছরে আপনাকে একটা বড় অঙ্কই খোয়াতে হয়। এ দিক বিবেচনায় আনলে সাদা কিংবা গ্রে চুলই বেশি ভালো।

ফ্যাশনে মানিয়ে যায়
সাদা চুল সব বয়সিদের ফ্যাশনের সঙ্গে মানিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ছোট-বড় যে কোন চুলেই এ রং অনেক সুন্দর দেখায়। এ কারণেও অনেকেই চুল সাদা করে থাকেন।

ক্ষমতায়নের বহি:প্রকাশ ঘটায়
যে কোন ব্যক্তির ক্ষমতায়নের বহি:প্রকাশ ঘটায় কালারফুল চুল। একইসঙ্গে চুল তার ব্যক্তিত্বেরও প্রকাশ ঘটায়। এ কারণে সেলিব্রিটিরা বেশিরভাগই চুলে কালার করতে আগ্রহী।

একঘেয়েমি দূর করে
সবসময় কালো চুলে একঘেয়েমি লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুদিন পর পর চুল সাদা কিংবা সিলভার কালার করলে চুলে বৈচিত্র্য আসে। একইসঙ্গে একঘেয়েমিও দূর হয়। এ কারণে তরুণ এবং বয়স্ক সেলিব্রিটিরা বৈচিত্র্য আনতেই সাদা চুলের দিকে ঝুঁকেন।

আত্নবিশ্বাস বাড়ায়
অনেকে সেলিব্রিটি বিশ্বাস করেন, চুলে বিভিন্ন কালার বিশেষ করে গ্রে কিংবা সাদা করলে তাদের আত্নবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। এ কারণেও তারা চুল করার পক্ষপাতী।


সাধারণত চুলের রং নির্ভর করে হরমোন মেলানিনের ওপর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মেলানিন তৈরির ক্ষমতা কমে আসে বলেই বৃদ্ধ বয়সে চুল সাদা হয়। আর কম বয়সে চুল পাকার অন্যতম কারণ হল জিন বা বংশগতির প্রভাব। কার চুল কী রঙের হবে তা নির্ভর করে জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষ হরমোন মেলানিনের ওপর। আবার খাবারদাবারের ভেজাল ও পরিবেশগত দূষণসহ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান বা জীবনযাপনের নানা সমস্যার কারণেও কম বয়সে চুল সাদা হতে পারে। তবে যারা সাদা ছাড়া চুলে কালার করাতে চান তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

এক্ষেত্রে ক্ষতি ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে চুলে কালার করার কৌশল-

চা পাতা
তিন টেবিল চামচ চায়ের পাতা এক ঘণ্টা গরম করুন। এরপর ভালো করে ঠান্ডা করুন। পরে চুল শ্যাম্পু করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার চায়ের পানি দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলে লালচে রং করতে এই পানি কিন্তু বেশ কার্যকর। তবে এভাবে ৫/৬ বার করলে চুলের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়।

আখরোট
চুলে কালচে লাল রঙ করতে আখরোট ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুই টেবিল চামচ গুঁড়ো করা আখরোট চার কাপ পানির মধ্যে গরম করুন। সারারাত রেখে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতেও কাঙ্খিত রঙ পাবেন।

দারুচিনি ও লবঙ্গ
চুলে গাঢ় বাদামী রঙ করতে চাইলে দারুচিনি ও লবঙ্গ ব্যবহার করুন। এক চা চামচ দারুচিনি ও এক চা চামচ লবঙ্গ পানির মধ্যে মিশিয়ে এক ঘণ্টা ধরে গরম করুন। পরে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে শ্যাম্পু করার পর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। ২০ মিনিট পর সাধারণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

লেবু
সব চাইতে ভালো প্রাকৃতিক হাইলাইটার হিসেবে কাজ করে লেবু। এতে চুলে আসে সুন্দর একটি রঙ। এই পদ্ধতিতে হাইলাইট করতে চাইলে একটি বাটিতে সম পরিমাণ লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোছা আলাদা করে নিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। পরে চুল শুকিয়ে উঠলে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ২/৩ বার করলেই দেখবেন চুল কি সুন্দর রঙ এসে গেছে।

অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু চুলের ঘরোয়া হাইলাইটের জন্য অলিভ অয়েলের ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। চুলের যে যে অংশ হাইলাইট করতে চান সে অংশে ভাল করে অলিভ অয়েল মাখিয়ে রোদে বসে থাকুন। অলিভ অয়েল সুরজের আলোর সঙ্গে রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে চুলের রঙ পরিবর্তন করে ফেলে। এতে করে পছন্দ অনুযায়ী চুল হাইলাইট করা হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র: হাফিংটনপোস্ট, নিটাইমস ম্যাগাজিন ও বোল্ডস্কাই ডট কম।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন