পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ। এই জ্বর নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন ২০-২৫ জন রোগী।
ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে অনেকেরই এই জ্বরটা হচ্ছে। এটি এক ধরনের ভাইরাস জ্বর। যার নাম চিকোনগুনিয়া। ডেঙ্গুর মতোই এর লক্ষণ। মশার কামড় থেকেই এই জ্বরের শুরু। চিকোনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে হাড়ে ও গিটে গিটে প্রচণ্ড ব্যাথা থাকে। শরীর হয়ে পড়ে প্রচণ্ড দুর্বল।’
তিনি আরো বলেন, ‘এতে আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা থাকবে। এক কথায় ডেঙ্গু এবং চিকোনগুনিয়ার লক্ষণ একই রকম। শুধু পার্থক্য হলো ডেঙ্গুতে রক্তের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এবং রোগীর ঝুঁকি অনেকটা বাড়ে। সেক্ষেত্রে চিকোনগুনিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কম। জ্বর তিন দিনে সেরে গেলেও, সাত থেকে ১০ দিন পর্যন্ত শরীর দুর্বল ও গিটে গিটে ব্যাথা থাকে।’
‘এই চিকোনগুনিয়া জ্বরের এখনো কোনো ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা শুরু হয়নি। আমরা প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গুর পরীক্ষা দিচ্ছি। যদি ডেঙ্গু জ্বর না ধরা পড়ে তাহলে আমরা ধরে নিচ্ছি চিকোনগুনিয়া’ যোগ করেন ডা. শাইখ।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদেরকে আমরা সাধারণত নাপা অথবা প্যারাসিটামল দিচ্ছি। এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কোনো দরকার নেই। প্রচুর পানি খেতে হবে। সাথে ডাবের পানি খেতে পারেন। লেবুর শরবত খেতে হবে। সাথে ওর স্যালাইন খেতে পারে। বিশ্রামে থাকতে হবে।’
চিকুনগুনিয়া প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে আফ্রিকায়, পরে বিশ্বের অন্য দেশেও তার বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা গেলেও পরে বিচ্ছিন্ন দু-একটি রোগী ছাড়া এ রোগের বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যায়নি বলে আইডিসিআর জানায়।
বর্ষার পর পর যখন মশার উপদ্রব বাড়ে, তখন চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
“তবে চিকুনগুনিয়ায় ভীষণ ব্যথা হয়, অনেক সময় নড়াচড়াই করা যায় না। ব্যথা হয় সব অস্থিসন্ধিতে,” বলেন ডা. আলমগীর।
গিটে গিটে ব্যথার পাশাপাশি মাথা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, চামড়ায় লালচে দানা, বমি বমি ভাবও চিকনগুনিয়ার লক্ষণ। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নাই। সাধারণত রোগটি এমনি এমনিই সেরে যায়, তবে কখনও কখনও গিটের ব্যথা দীর্ঘদিন থাকতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। গিটের ব্যথার জন্য ঠাণ্ডা পানির সেক এবং হালকা ব্যয়ামও করা যেতে পারে।
প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিটের ব্যথা ভালো না হয় তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিরোধকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আইইডিসিআর। এক্ষেত্রে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেওয়ার পাশাপাশি এই পতঙ্গের আবাসস্থল ধ্বংস করতে বলা হয়েছে।
বাসার আশেপাশে ফেলানো মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যে সব স্থানে পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করে। তাই এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে এবং নিয়মিত বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করতে হবে।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী বলেন, এরকম মৌসুমি জ্বর বা ঠাণ্ডায় ভয়ের কোনো কারণ নেই। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। ভয় পেয়ে শুধু শুধু এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। জ্বর যদি তিন দিনের বেশ হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পিএনএস/আলআমীন
ঢাকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে চিকুনগুনিয়া
17-05-2017 11:15AM