সেনা তহবিলে টাকা দিতে বাধ্য করা কেমন দেশপ্রেম?

  26-10-2016 02:37PM


পিএনএস ডেস্ক: বলিউড ফিল্মে পাকিস্তানি শিল্পীদের নেবার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে সেনা তহবিলে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করেছে মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার সর্বাধিনায়ক রাজ ঠাকরে। এভাবে জোর করে টাকা আদায়ে অবশ্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উরি এবং পাঠানকোট জঙ্গি হামলার জেরে বলিউড ছবির প্রযোজক করণ জোহরকে তার ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবিতে পাকিস্তানের অভিনেতা ফাওয়াদ খানকে অভিনয়ের সুযোগ দেবার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে ছবিটির মুক্তিলগ্নে সেনা বাহিনীর কল্যাণ তহবিলে পাঁচ কোটি টাকা দিতে বাধ্য করে মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার সর্বাধিনায়ক রাজ ঠাকরে।

ছবিটির ‘মুক্তিপণ’ হিসেবে এই টাকা না দিলে করণ জোহরের ছবি চলতে দেওয়া হবে না, সিনেমা হলে বা মাল্টিপ্লেক্সে ছবিটি দেখানো হলে ভাঙচুর চালানো হবে- এমন হুমকি ছিল।

২৮শে অক্টোবর ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। তার আগে এই নিয়ে তুমুল শোরগোল, আপত্তি, প্রতিবাদ। সংস্কৃতিমনস্ক নাগরিক সমাজ তো বটেই, খোদ সেনাবাহিনীর তরফেও এই রকম জোর করে সেনা কল্যাণ তহবিলের জন্য টাকা আদায়ে তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে।

সেনা বাহিনীর বর্তমান এবং অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ অফিসাররা সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী অ-রাজনৈতিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। সেনা ত্রাণ তহবিলের নামে জোর করে বা ভয় দেখিয়ে টাকা তোলাটা জাতীয় সংবেদনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার মতো দলগুলির নিছক রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা।

তারা বলেন, সেনাবাহিনীকে অর্থের জন্য হাত পাততে হয় না। যদি কেউ স্বেচ্ছায় দিতে চান, তাহলে অন্যসব নাগরিকের মতো দিতে পারেন। নব নির্মাণ সেনার এই কায়দা মেনে নেওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সেনা কর্তৃপক্ষ যুদ্ধকালীন হতাহতদের ত্রাণ সাহায্যের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এই তহবিলে দান করা সম্পুর্ণ স্বেচ্ছাধীন। এই দান আয়করমুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশের সংস্কৃতিমনস্ক নাগরিক সমাজের কেউ কেউ রাজ ঠাকরের হুমকি দিয়ে এভাবে টাকা আদায় করাকে এক ধরণের রাজনৈতিক তোলাবাজি বলে মনে করছেন।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ থাকার সঙ্গে দুই দেশের শিল্প সংস্কৃতির স্বাভাবিক সংযোগ থাকতে পারে না। থাকলে সন্ত্রাসীরা আরো আস্কারা পেয়ে যাবে৷ পাশাপাশি, বলিউড ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিজকে রাজ ঠাকরে বা তার দল যেভাবে হুমকি দিচ্ছে, তা এক বিপজ্জনক সংকেত দেয়।

নিজের রুচি ও পছন্দমতো সৃষ্টিশীল কাজ করা এদেশে ক্রমশই কঠিনতর হতে পারে। এটাকে কি বলা যায় ? ফ্যাসিবাদ ?

আঙুল উঠেছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ফাড়নাবিসের ভূমিকা নিয়ে। কেন তিনি রাজ ঠাকরের মতো জনভিত্তিহীন এক নেতাকে প্রশ্রয় দিলেন?

গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার জায়গা হয়েছিল সবথেকে নীচে। সেদিক থেকে তাকে কেউকেটা নেতা মনে করার কারণ নেই। কারণ নেই তার হুমকিকে আমল দেবার৷ তাহলে মুখ্যমন্ত্রী এই বিবাদের মধ্যস্থতা করতে গেলেন কেন?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ ঠাকরের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলেন না কেন?

অনেকের মতে, বলিউড ফিল্ম থেকে পাকিস্তানিদের তাড়ানোটা চুড়ান্ত দেশপ্রেমের প্রমাণ হয় না। পাকিস্তানকে কূটনৈতিক দিক থেকে একঘরে করার সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই।

দ্বিতীয়ত, ফাওয়াদ খানের বৈধ ভিসা আছে। কেন্দ্রীয় সরকার তার ভিসা বাতিল করেননি। ফাওয়াদ খানের বিরুদ্ধে কোনোরকম বেআইনি কাজের অভিযোগ নেই। তা ছাড়া যখন তিনি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবির শুটিং করছিলেন, তখন অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদী তখন গিয়েছিলেন লাহোরে।

মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং স্পষ্টভাবে বলেছেন, পাকিস্তানি শিল্পীদের ভিসা বাতিল করা হবে না। দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষগৃহে ছবি রিলিজ করার সময় যাতে কোনোরকম গণ্ডগোল না হয় তারজন্য সরকার সব রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, মোদী সরকার কতটা সহিষ্ণু ও উদার। সূত্র: ডয়চে ভেলে

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন