মিস্টার নরমাল

  03-12-2016 12:27PM


পিএনএস ডেস্ক: বাবা-মা নাম রেখেছিলেন নরমাল। কি ভেবে রেখেছিলেন তা অবশ্য অজানা। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিতেরাঁর কাছে নামটি ছিল খুবই পছন্দের। তাই তিনি ডাকতেন মিস্টার নরমাল বলে। আসলে তিনি আর কেউ নন। আজকের ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। হবার কথা ছিল আইন বিশেষজ্ঞ। আইনের ডিগ্রিও নিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকটা নাটকীয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। সংস্পর্শে আসেন এক সময়ের অসম্ভব জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর। হয়ে যান তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। এর আগে অবশ্য ১৯৭৯ সনে সোস্যালিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ’৮৮ সনে হন এমপি। ’৯৭ সনে দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। আর ২০১২ সনে হয়ে যান প্রেসিডেন্ট। নিকোলাস সারকোজির রোমান্টিক জীবনের পটভূমিতে দায়িত্ব নেন তিনি। নানা চ্যালেঞ্জ তখন সামনে। দলের ভেতরেই তখন অনৈক্যের সুর ছিল প্রবল। যেহেতু তার স্বচ্ছ ক্যারিয়ার সেজন্য তাকে কেউ আটকাতে পারেনি। কে জানতো অল্পদিনের মধ্যেই ‘লাভ লাইফ স্ক্যান্ডাল’ তাকে স্পর্শ করবে।

মিডিয়া অবশ্য আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছিল। বিরোধীরা বলেছিলেন, দেখা যাক মিস্টার নরমাল ফরাসি জাতিকে কতোটা নরমাল রাখতে পারেন। শুরুটা ছিল চমৎকার। বেকারত্ব কমানোর প্রতিশ্রুতি তাকে কিছুটা সাহসী করে তোলে। কারণ দায়িত্ব নেয়ার পর পরই বেকারের হার কিছুটা কমতে থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তেমন ছিল না। কিন্তু ক’বছরে বেকারের হার রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তখন মাঠে। সংস্কারের দাবিতে শ্রমিকরা রাজপথে। দলের ভেতরের এক বড় অংশ নড়াচড়া শুরু করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভাল্স তলে তলে ঘুঁটি নাড়তে থাকেন। তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন উঁকিঝুঁকি মারছিল। ওঁলাদ তা জানতেন। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। কারণ ইসলামী জঙ্গিরা ওঁলাদের বিরুদ্ধে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। পরপর কয়েকটি ঘটনায় ২৩০ জন মানুষ প্রাণ দেন। মানুষের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।

প্যারিস হামলার পর দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ নেন। ক্ষোভ তৈরি হয় তার দলের মধ্যেই। প্রতিবাদে বিচারমন্ত্রী ইস্তফা দেন। সাবেক ফ্রান্স কলোনি মালিতে সামরিক অভিযান শুরু করেন। যা কিনা তার অস্তিত্বকে নড়বড়ে করে দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় শরণার্থী সমস্যা। ওঁলাদের প্রশাসন টালমাটাল হয়ে যায়। জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হন। মিডিয়া তখন তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। হারাতে থাকেন জনপ্রিয়তা। জনমত জরিপগুলো চলে যায় তার বিপক্ষে।

জল্পনা চলে তিনি কী দ্বিতীয় টার্মের জন্য লড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে বললেন, আমি আর লড়ছি না। ‘অ্যালেসি প্যালেসে’ থাকার আর আমার ইচ্ছা নেই। ১৯৫৮ সনের পর এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় টার্মের জন্য লড়াই করছেন না। ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাসে এটা এক নতুন অধ্যায়। ৬২ বছর বয়সী ওঁলাদ যখন টিভিতে কথা বলছিলেন তখন তার চেহারায় হতাশার ছাপ। মনে হচ্ছিল তিনি যেন একজন পরাজিত সৈনিক। বললেন, আমি তো আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। কী করেছি না করেছি তা দেশবাসী সবই জানেন। আমি অন্যদের সুযোগ করে দিতে চাই। দলের কোনো নেতাকে তিনি দুষলেন না।

তবে এখানে বলে রাখা ভালো, গত রোববার ম্যানুয়েল ভাল্স ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি তার বসকে চ্যালেঞ্জ করবেন। সম্ভবত এটাই ওঁলাদকে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা বাধ্য করেছে। না হলে, ক্ষমতার লোভ নেই এমন রাজনীতিক কয়জন আছেন এই দুনিয়ায়?

নানা কূটকৌশল আর জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকার নতুন ইতিহাস তো রচিত হয়েই গেছে। এমনকি গণতান্ত্রিক বিশ্বেও। ব্রেক্সিট রাজনীতির পট সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। বৃটেন পথ দেখিয়েছে। কিন্তু তারা তেমন ফায়দা পায়নি। দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতি আছে। কিন্তু অর্থনীতিতে অস্থিরতা। পাউন্ডের দাম উঠানামা করছে নজিরবিহীনভাবে।

তবে বলতেই হবে, ব্রেক্সিটের মজা লটেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ফ্রান্সের ফার রাইট পার্টির ম্যারিন ল্য পেন জোর কদমে এগিয়ে চলেছেন। জনমত জরিপে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সময় যে তার জন্য অপেক্ষা করছে এটা বোধ করি বলার অপেক্ষা রাখে না। ডনাল্ড ট্রাম্পও জনমত জরিপে পিছিয়ে থেকে বাজিমাত করেছেন।

ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বিরতি টানলেন। তবে কী করবেন সেটা কিন্তু বলেননি। তিনি হয়তো বসে বসে হিসাব মেলাচ্ছেন কেন তার এই বিপর্যয় ঘটলো। জনগণ কেন মুখ ফিরিয়ে নিলো। অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী মে পর্যন্ত। এর মধ্যে আধুনিক ফ্রান্সে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন