চীন-ভারত উত্তেজনা চরমে, কাশ্মীরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য চীনকে দায়ী

  22-04-2017 12:40PM


পিএনএস ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি ক্রমেই ভারতের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাচ্ছে। ভারতের দাবি কাশ্মীর উপত্যকায় অশান্তির আগুনে আড়াল থেকে ইন্ধন দিচ্ছে চীন।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুপ্তচর বিভাগের কাছে সম্প্রতি তথ্য এসেছে যে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য গোপনে কাশ্মীর তাস খেলছে বেইজিং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ভাষ্য- ‘শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্বার্থই নয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতকে কোণঠাসা করার যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন, এটি তারই অঙ্গ।’

কাশ্মীরে লাগাতার অশান্তির কারণ হিসেবে কেন্দ্রের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব, সেখানকার মানুষের বিচ্ছিন্নতাবোধ, উপত্যকার আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থতাও জড়িয়ে রয়েছে।

দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানকে সামনে রেখে পিছন থেকে খেলছে চীন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুসারে, গিলগিট–বালটিস্তানকে পঞ্চম প্রদেশ হিসেবে পাক ঘোষণার পিছনে রয়েছে চীনের মদত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একটা বড় অংশ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের জন্য বেজিং-এর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বালুচিস্তানের গদর বন্দর পর্যন্ত হাইওয়ে বানাতে চাইছে চীন।

তবে কাশ্মীরে অশান্তিতে মদতের বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষা করেই করছে বেইজিং। তার কারণ চীনের জিনঝিয়াং প্রদেশে জঙ্গিবাদ বেইজিংয়ের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশ্যে পাক জিহাদিদের সমর্থন করে স্বদেশে কোনো ভুল বার্তা দিতে চাইছে না চীন। কিন্তু পাক জঙ্গিদের সব রকম সাহায্য করার কাজ চলছে।

বেশ কিছু দিন ধরে কাশ্মীরে পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসের ধাঁচও কিছুটা বদলেছে বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। এই বদলের পিছনে চীনা মস্তিষ্ক রয়েছে বলে খবর। সাধারণ মানুষকে নিশানা করে হামলার ছক বদলে, রাষ্ট্রশক্তির উপর সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে। নিশানায় আসছে সেনা, কেন্দ্রের আধা সামরিক বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে কাশ্মীরের এই লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠছে তথ্য। যা কিনা, এ কে ৪৭, গ্রেনেড কিংবা পাথরের তুলনায় কম শক্তিশালী নয়।

ভারতীয় সেনা অথবা পুলিশ বাহিনীর অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হচ্ছে। যেখানে কোথাও পাথর ছোড়া রুখতে জনতার উপর লাঠি চালাচ্ছে পুলিশ। কোথাও বা গাড়িতে বেঁধে রাখা হয়েছে আন্দোলনকারীকে।

পর্দার আড়ালে থেকে জঙ্গিদের মদত তো রয়েইছে, বেইজিং আজ নয়াদিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, দালাই লামাকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইলে তার মূল্য চোকাতে হবে ভারতকে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ আরো বলা হয়েছে, অরুণাচলের ছয়টি জায়গার নামকরণ করে কোনো ভুল করেনি চীন। কাশ্মীর নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই রাজ্যের বিজেপি মন্ত্রী প্রকাশচন্দ্র গঙ্গার মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন, ‘পাথর মারছে যারা, তাদের শাস্তি দিতে বুলেট ছোড়ো।’ এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ পিডিপি।

অমিত শাহ কাশ্মীরে যাওয়ার আগে এই বিষয় নিয়ে আজ দুই শরিকের আলোচনাও হয়েছে। বিজেপি নেতা রাম মাধব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে থেকেই অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা চলে আসছে। সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যটিকে ফের ‘দক্ষিণ তিব্বত’ আখ্যা দিয়েছে বেইজিং। চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় অরুণাচল প্রদেশের ছয়টি অঞ্চলের নতুন নামকরণ করেছে। ১৪ এপ্রিল এই নতুন নামগুলি ঘোষিত হয়েছে বলে চীনের শাসক নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে।

দালাই লামার অরুণাচল সফর নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল চীন। তিব্বতি ধর্মগুরুকে ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘চক্রান্তকারী’ আখ্যা দিয়ে বেজিং হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, দালাই লামাকে ভারত অরুণাচলে যেতে দিলে ফল খারাপ হবে। চাপের কাছে অবশ্য ভারত মাথা নত করেনি।

বেজিংয়ের এই হুঁশিয়ারিকে ‘অনধিকার চর্চা’ আখ্যা দিয়েছিল নয়াদিল্লি। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই অরুণাচল সফরে যান দালাই লামা। তার পরই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়ে জানায়, চীন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি করে দিয়েছে নয়া দিল্লি। ভারতের বিরুদ্ধে চীন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও বেজিং হুমকি দেয়। সেই পথে হাঁটা যে শুরু হয়ে গেল, তা চীনের এই সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট।

গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বুধবার জানানো হয়েছে, চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রক ১৪ এপ্রিল দক্ষিণ তিব্বতের ছয়টি অঞ্চলের নতুন চীনা নামকে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনা ভাষার নামগুলিকে তিব্বতি এবং রোমান বর্ণমালায় কী ভাবে লিখতে হবে, তাও মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। যে ছ’টি নতুন চীনা নামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল— ও’গিয়াইনলিং, মিলা রি, কোইড গারবো রি, মাইনকুকা, বি মোলা, নামকাপুব রি।

অরুণাচল প্রদেশকে দীর্ঘ দিন ধরেই ‘দক্ষিণ তিব্বত’নামে ডাকে চীন। ১৯৬২-র যুদ্ধে চীনা সেনা অরুণাচলের ভিতরে ঢুকেও পড়েছিল, পরে তারা ফিরে যায়। গোড়া থেকেই ভারতের শাসনে রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ। কিন্তু চীন অরুণাচলকে ভারতের অংশ বলে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। চীনের দাবি, অরুণাচল দু’দেশের মধ্যে একটি বিতর্কিত এলাকা।

ভারতের পাল্টা দাবি, ১৯৬২-র যুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীরের যে এলাকা (আকসাই চীন) দখল করেছিল চীন, সেই এলাকা ভারতকে ফেরত দেওয়া হোক। কিন্তু চীন তাতেও নারাজ। ফলে জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে অরুণাচল পর্যন্ত বিস্তৃত সুদীর্ঘ চীন-ভারত সীমান্ত বহু বছর ধরেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির পথে কাঁটা হয়ে রয়েছে। সেই কাঁটাকে আরো তীক্ষ্ণ করে তুলল চীন। শান্তি এবং স্থিতিশীলতার সম্পূর্ণ উল্টো দিকে হেঁটে অরুণাচলের ছ’টি এলাকার নতুন নামকরণ করল তারা। এ নিয়ে নয়া দিল্লি সরকারের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তারাও এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন