মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যায় ভারতে নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ

  29-06-2017 01:45AM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতে একের পর এক মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বুধবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে সেদেশের নাগরিক সমাজ।

একটি বেসরকারী হিসাবে বলা হচ্ছে- ২০১৫ থেকে এখনো পর্যন্ত অন্তত ১৩টি এ ধরণের ঘটনা হয়েছে, যেখানে মুসলমান কোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে মারধর করা হয়েছে।

গত তিনমাসে এধরণের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬ জন মুসলমানের। এ ধরণের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধেই এদিন দিল্লি-সহ ভারতের নানা জায়গাতেই সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিয়ে ‘নট ইন মাই নেম’ নাম দিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে কলকাতাতেও।

দক্ষিণ কলকাতার একটি খোলামেলা বিপনি বিতান চত্বরে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন শুধুমাত্র একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা ফেসবুক পোস্ট দেখে। ‘নট ইন মাই নেম’ হ্যাশ ট্যাগও চালু হয়েছে মুসলমানদের চিহ্নিত করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে।

কলকাতায় যারা এই প্রতিবাদ সমাবেশের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন, তাদেরই অন্যতম অঞ্চিতা ঘটক বলছিলেন, ‘চতুর্দিকে যেসব ঘটনা হচ্ছে, তাতে সত্যিই আমরা বিচলিত। আমাদের মনে হচ্ছে দেশে হিন্দুত্বের একটা আগ্রাসন শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে খুবই উগ্র জাতীয়তাবাদও তৈরী করা হচ্ছে, যার সঙ্গে আবার হিন্দু ধর্মকে জুড়ে দেয়া হচ্ছে।’

কলেজ শিক্ষক সম্রাট সেনগুপ্ত বলছিলেন কেন তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের চিহ্নিত করে গণপিটুনি দিয়ে আহত - এমনকি মেরে ফেলার ঘটনাও খুব বেশী ঘটতে শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘একটা শ্রেণির মানুষের হাতে একরকম ক্ষমতায়ন হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তিশালী মুসলিম বিদ্বেষ আগে থেকেই ছিল। কেন্দ্রে যে দল এখন ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের বলে বলীয়ান হয়ে ওই শ্রেণীর মানুষ নিজেদের বিদ্বেষটাকে উগরে দিতে শুরু করেছে।’

সমাবেশে প্রগতিশীল লেখক-বুদ্ধিজীবি, কবি, গায়ক, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই হাজির ছিলেন কলকাতার বেশ কিছু মুসলমান যুবক। তাদেরই একজন মুহম্মদ রাফে সিদ্দিকির কাছে জানতে চেয়েছিলাম সম্প্রতি মুসলমানদের পিটিয়ে মারার যেসব ঘটনা হচ্ছে ভারতে, তাতে তারা কতটা আতঙ্কিত।

রাফে সিদ্দিকির কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গে অন্তত আমাদের সেই ভয়টা নেই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশে আত্মীয়-বন্ধুদের কাছ থেকে যা খবর পাই, তাতে ওরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। গোরক্ষার নাম করে হোক বা অন্য যে কোনো নামেই, কেন্দ্রীয় সরকারের তো দায়িত্ব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার। এই পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না, এটা আনএক্সেপ্টেবল।’

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে এদিন যে নাগরিক প্রতিবাদ হয়েছে, কলকাতার সমাবেশের খবরও সামাজিক মাধ্যম দিয়েই ছড়িয়েছিল প্রথমে। আইনজীবি অধিরাজ রায় ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখেই প্রতিবাদে যোগ দিতে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘এরকম একটা নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক জমায়েতের খুব দরকার ছিল, যেখানে কোনো রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ব্যানার ছাড়া সমাজের নানা মানুষ এক জায়গায় জড়ো হবেন, একটাই দাবি নিয়ে, একটাই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে। সেদিক থেকে এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল উদ্যোগ।’

ঘটনাচক্রে, আজকের প্রতিবাদ সমাবেশগুলো কোনো রাজনৈতিক অথবা অরাজনৈতিক সংগঠন আয়োজন করে নি। কোথাও কোনো সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যানার পোস্টারও ছিল না - একটাই কথা প্রতিবাদে সামিল সকলের বুকে ঝোলানো প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল - নট ইন মাই নেম - যেরকমটা যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সভাগুলোতে বলা হত একটা সময়ে।
সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন