আটশ-নয়শতে বিক্রি হচ্ছেন তারা

  16-12-2017 01:30PM


পিএনএস ডেস্ক: নিলামে চলছে ডাক_৮০০, ৯০০ ... ১০০০ ... ১১০০। অবশেষে ১২০০ দিনারে বিক্রি হলো। যার মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার।

এই দাম কোনো গাড়ি, জমি বা আসবাবের নয়। কোনো পণ্যদ্রব্যেরও নয়। এ দাম দুটি মানুষের। এদের একজন নাইজেরিয়ার নাগরিক। বয়স বিশের ঘরে। পরনে মলিন জামা ও ট্রাউজার।

হাঁকডাকের সময় নিলামকারী বারবার বলছিলেন, এই ছেলে ‘খেতেখামারে কাজের জন্য শক্তসমর্থ’। কে নিতে আগ্রহী।

এই দৃশ্য লিবিয়ার। কেউ মোবাইলে তা ধারণ করেছে। সিএনএন ভিডিও দেখার পর তদন্তে নামে। গোপন ক্যামেরা নিয়ে সিএনএনের একটি দল গত মাসে রাজধানী ত্রিপোলির বাইরে এক জায়গায় দেখতে পায়, নিলামের জন্য ১২ জনকে তোলা হচ্ছে। ৬ থেকে ৭ মিনিটের মধ্য তারা বিক্রি হয়ে গেল। বিক্রেতা বারবার বলছিল, ‘কারও কি খননকারী দরকার? এই যে সে একজন শক্তসমর্থ খননকারী। আমি কি দাম বলব?’

বিক্রেতা ডাক তুললেন ৫০০, ৫৫০, ৬০০, ৬৫০ ...। ক্রেতারা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী হাত তুলতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই অসহায় মানুষগুলো নতুন মনিবের দাসে পরিণত হলো।

প্রতিবছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী স্বপ্নের ইউরোপের উদ্দেশে লিবিয়া সীমান্ত দিয়ে ঢোকে। যুদ্ধাবস্থা থেকে বাঁচতে অথবা অর্থনৈতিক ভাগ্যোন্নয়নের আশায় তারা নিজ দেশ ছাড়ে। লিবিয়ার সমুদ্র উপকূল দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে হয় তাদের। নিজেদের সবকিছু বিক্রি করে সমুদ্রযাত্রা করে তাদের অনেকে গন্তব্যে যেতে সক্ষম হয়। আবার অনেককেই জিম্মি করা হয়। অনেককেই বিক্রি করে দেওয়া হয় অথবা ছেড়ে দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে।

কিন্তু সম্প্রতি লিবিয়া উপকূলে কোস্টগার্ড কড়া নজরদারি রাখছে। এতে এই উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশী বোঝাই নৌকা ভিড়তে পারছে না। তাই মানব পাচারকারীদের হাতে এখন অনেকেই জিম্মি। এই সুযোগে এই মানব পাচারকারীরা হয়ে উঠছে দাসমালিক। আর অভিবাসনপ্রত্যাশীরা পরিণত হচ্ছে দাসে।

২০১১ সালে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে আইনের শাসন তেমন করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সব সময় লেগে আছে গোলযোগ। অস্ত্রধারীরা জমি ও সম্পদের দখল নিয়ে প্রতিনিয়ত লড়ছে। এই সুযোগে মানব পাচারকারী চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এমন দুজন দাসের সঙ্গে কথা বলে সিএনএন। তখন তারা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। তারা খুব ভয় পাচ্ছিল। যে-ই তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছিল, তারা মনে করছিল, এই বোধ হয় আবার তাদের বিক্রি করা হবে।
সিএনএন তাদের গো
পন ক্যামেরায় ধারণ করা এই ভিডিও লিবিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা এ ঘটনার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ত্রিপোলির ফার্স্ট লে. নাসের হাজাম অ্যান্টি-ইলিগেল ইমিগ্রেশন এজেন্সি সিএনএনকে বলেন, তিনি যদিও নিজের চোখে নিলামে দাস বিক্রির বিষয়টি দেখেননি, তবে তিনি জানতে পেরেছেন, দেশজুড়ে সংগঠিত এক চক্র পাচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন