সিরিয়ার অবস্থা

  20-03-2018 02:39AM

পিএনএস ডেস্ক: সাত বছর আগে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল সেটি ছিল শান্তিপূর্ণ।

অথচ সেদিনের শান্তিপূর্ণ ক্ষোভ-বিক্ষোভের জেরে এখন গৃহযুদ্ধের আগুনে পুড়ে প্রায় ছাই হয়ে গেছে সিরিয়া।
সাত বছরের লড়াই, আক্রমণ আর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ।

কীভাবে যুদ্ধ শুরু হল?
তবে সিরিয়া সংকট শুরুর আগে থেকেই দেশটিতে উচ্চ বেকারত্ব, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক অধিকার না থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে।

প্রেসিডেন্ট আসাদ তার বাবার কাছ থেকে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন ২০০০ সালে। আর ২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থীরা আরব বসন্তে উজ্জীবিত হয়ে প্রথম বিক্ষোভ করেন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দিরায়।

তবে সরকার এ বিক্ষোভ দমনে রক্তক্ষয়ের পথ বেছে নেয় যাতে প্রতিবাদ আরও ছড়িয়ে পড়ে, যা একপর্যায়ে দেশজুড়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। ফলে বিক্ষোভ যেমন বাড়ে তেমনি বাড়ে দমনপীড়ন।

একপর্যায়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় বিরোধীরা, যা প্রথমে আত্মরক্ষায় আর পরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। আসাদ পুরো বিষয়টি ‘বিদেশি সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যায়িত করে একে সমূলে উৎপাটনের ঘোষণা দেন।

কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে? যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা দি সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাব মতে, চলতি মাস পর্যন্ত সিরিয়ায় মোট নিহত হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ মানুষ, যার মধ্যে এক লাখ ৬ হাজার বেসামরিক নাগরিক।

তবে এর মধ্যে নিখোঁজ ৫৬ হাজার ৯০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং ধারণা করা হয় তারা আসলে মারাই গেছেন।

কী নিয়ে এই যুদ্ধ?
এটি এখন আসলে আর প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন গ্রুপ ও দেশ নিজেদের নানা স্বার্থে এতে জড়িত হয়ে পড়েছে, যা লড়াইকে করছে প্রলম্বিত।

সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শিয়া ধর্মাবলম্বী বাশার আল আসাদের সুযোগ নিয়ে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও। এমনকি ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদাকে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আর সিরিয়ার কুর্দিরাও এ সংকটে যোগ করেছে নতুনমাত্রা।

কারা কারা জড়িত এ সংকটে?
সিরিয়া সরকারের সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের রসদ জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সৌদি আরব।

রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করেছে সিরিয়ায়। ২০১৫ সাল থেকে তারা সেখানে বিমান হামলাও শুরু করে। অন্যদিকে ইরান সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি আসাদ সরকারের জন্য ব্যয় করছে বিলিয়ন ডলার।

শিয়া মুসলিমদের অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে সহযোগিতা করছে ইরান। অন্যদিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর মধ্যে থেকেই লড়াই করছেন ইরাক, আফগানিস্তান ও ইয়েমেন থেকে আসা যোদ্ধারা।

আবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন ‘উদারপন্থী’ বিদ্রোহীদের সহায়তা দিচ্ছে।

বিদ্রোহীদের একটি অংশের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে তুরস্কেরও।

সৌদি আরব যারা ইরানের প্রভাব খর্ব করতে চায়, তারাও বিদ্রোহীদের একটি অংশের প্রতি অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।

আর ইসরাইল। তারা হিজবুল্লাহকে ইরানিরা অস্ত্রশস্ত্র পাঠায় কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, এমনকি একবার তারা বিমান হামলাও করেছিল এমন যুক্তিতে।

গৃহযুদ্ধে কতটা ক্ষতি হল দেশটির?
লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ছাড়াও অন্তত ১৫ লাখ মানুষ স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ হাত-পা হারিয়েছেন।

দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৬১ লাখ মানুষ।

আর বিদেশে চলে গেছে ৫৬ লাখ সিরিয়ান। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান ও তুরস্কে। সেখানে অনেকেই মানবিক সহায়তা পর্যন্ত পাচ্ছে না।

দেশটি এখন কত ভাগে বিভক্ত?
দেশের বড় শহরগুলোর ওপর সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে সত্যি কিন্তু দেশটির বড় অংশই এখনও বিদ্রোহী ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ জোটের নিয়ন্ত্রণেই আছে।

২৬ লাখ লোকের শহর ইদলিবে শক্ত অবস্থানে আছে বিরোধীরা। পূর্ব ঘৌটায় চলছে ব্যাপক লড়াই। আবার রাকাসহ ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বাঞ্চলজুড়ে নিয়ন্ত্রণ আছে এসডিএফের।

রাকা ছিল আইএস ঘোষিত খেলাফতের রাজধানী। আইএস অবশ্য এখন সিরিয়ার খুব অল্প জায়গাতেই টিকে আছে।

এ যুদ্ধ কবে শেষ হবে?
খুব শিগগির এ যুদ্ধ শেষ হবে তার কোনো সম্ভাবনা এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০১২ সালের জেনেভা ঘোষণা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন গভর্নিং বডির কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছে। যদিও ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘ মধ্যস্থতায় ৯ দফা শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই।

প্রেসিডেন্ট আসাদবিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি নন। আবার বিদ্রোহীরা চাইছে বাশার আল আসাদ পদত্যাগ করুক।

আবার পশ্চিমা বিশ্ব শান্তি প্রক্রিয়াকে গুরুত্বহীন করার জন্য দোষারোপ করছে রাশিয়াকে।

অন্যদিকে রাশিয়ার জাতীয় সংলাপের আয়োজন করলেও তাতে বেশিরভাগ বিরোধীগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাই যোগ দেননি।

সব মিলিয়ে কবে শেষ হবে এ যুদ্ধ তার আসলে কোনো ইঙ্গিত নেই কোনো দিক থেকেই।
সূত্র: বিবিসি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন