ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের পরিকল্পনায় সৌদি

  04-12-2020 11:50PM

পিএনএস ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যে ‘দখলদার’ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব। তবে এই মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় না দেশটি। এর জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায়।

গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিল বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই চুক্তির শর্ত হিসেবে তারা ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও দেয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের পর বাহরাইন ও আরব আমিরাত হচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ উপসাগরীয় দেশ যারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধনকারী দেশ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে বাহরাইন ও আরব আমিরাতের এই চুক্তিতে সৌদির সমর্থন ছিল তা বলাই বাহুল্য। কারণ এই দুই দেশ আঞ্চলিক একাধিক ইস্যুতে সৌদির ইঙ্গিতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন ধরুন, কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধের কথা। সৌদির সঙ্গে ২০১৭ সালে যখন কাতারের বিবাদ হয়, তখন রিয়াদের ডাকে সাড়া দিয়ে কাতারবিরোধী জোটে যোগ দিয়েছিল আমিরাত ও বাহরাইন। আবার ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী দমনের নামে যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে তার সঙ্গীও এই দুই দেশ।


গত নভেম্বরে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোপনে সৌদি আরব সফর করেছেন। সেখানে তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। এই সফরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োশি কোহেনও ছিলেন। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে অস্বীকার করলেও ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঐতিহাসিকভাবে বৈরি দেশ দুটির মধ্যে প্রথম কোনো বৈঠকের খবর ফাঁস হলো।

গত মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সৌদি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই মুহূর্তে পদক্ষেপ নিতে অনিচ্ছুক, কারণ তিনি পরবর্তীতে নতুন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে এ সংক্রান্ত চুক্তিকে কাজে লাগাতে চাইবেন।’

ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্কের ব্যাপারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ‘অন্যান্য অভিযোগ বিশেষ করে সৌদির মানবাধিকার ইস্যু থেকে বাইডেনের নজর ফিরিয়ে রাখতে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি মুলা হিসেবে ঝুলিয়ে রাখতে পারে।’


গত শুক্রবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যশ চ্যানেল থার্টিন জানায়, চুক্তির জন্য তিনটি শর্ত আরোপ করেছে সৌদি। এগুলো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কেনার চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত সৌদি কর্মকর্তাদের নাম সরিয়ে ফেলা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতিশ্রুতি।

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে সৌদি আরব। ট্রাম্প প্রশাসনকে সামাল দিতে পারলেও জো বাইডেন তার নির্বাচনী ভাষণে এসব ব্যাপারে সৌদির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছিলেন। সৌদির শত শত কোটি ডলার অস্ত্র কেনার প্রস্তাবও আটকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনের চেয়ে নিজের স্বার্থের দিকেই বেশি নজর দিতে চায় সৌদি। তাই বাইডেন প্রশাসনকে পাশে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকেই হয়তো বেছে নিতে চাইবে সৌদি।

ইসরায়েলের প্রতি নিজেদের নমনীয় অবস্থান প্রকাশ করতেই গত সোমবার আমিরাতগামী তেল আবিবের বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সৌদি। লক্ষণ দেখে বলা যায়, নতুন বছরে হয়তো ফিলিস্তিনিদের স্বার্থকে কুরবানি দিয়েই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে সৌদি আরব।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন